শাহবাগে শিবিরের সেইসব ‘আপত্তিকর শ্লোগান’ নিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করলো এনসিপি

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে চলমান আন্দোলনে উত্থাপিত ‘আপত্তিকর’ স্লোগান নিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটি জানিয়েছে, এই ধরনের স্লোগানের দায়ভার এনসিপির নয় এবং তাদের সঙ্গে এসব স্লোগানের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

সোমবার (১২ মে) সকালে এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব সালেহ উদ্দিন সিফাত স্বাক্ষরিত এক লিখিত বিবৃতিতে এই অবস্থান জানানো হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, “আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি—একটি বিশেষ পক্ষ আন্দোলনে অংশ নিয়ে দলীয় স্লোগান ও বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সংগ্রামবিরোধী বক্তব্য ছড়িয়েছে। এতে চলমান আন্দোলনের ঐক্য বিনষ্ট হয়েছে।”

এনসিপির দাবি, আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করা, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আওতায় দলগত বিচার দাবি এবং ‘জুলাইয়ের ঘোষণাপত্র’ জারির আন্দোলনে সাধারণ ছাত্র-জনতা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও মতের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিলেও, একটি গোষ্ঠী উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিভ্রান্তিকর স্লোগান তুলে ঐক্যে ফাটল ধরিয়েছে।

তারা স্পষ্ট জানায়, এনসিপির কোনো সদস্যই এমন কোনো স্লোগান দেয়নি যা জাতির সংগ্রাম ও ইতিহাসের পরিপন্থী। এই স্লোগানগুলো যারা দিয়েছে, তাদেরকেই এর দায় নিতে হবে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এনসিপি নেতাকর্মীদের বক্তৃতা ও স্লোগানে বরং ১৯৪৭, ১৯৭১ এবং ২০২৪ সালের ঐতিহাসিক সংগ্রামের প্রতিফলন ছিল।

আন্দোলনের সময় জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনা নিয়ে একটি পক্ষ আপত্তি জানালেও, এনসিপি বলছে, আন্দোলনকারীরা সেই আপত্তি উপেক্ষা করে সম্মানের সাথে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন।

বিবৃতিতে এনসিপি আরও মন্তব্য করে, “আমরা বিশ্বাস করি, ১৯৪৭, ১৯৭১ এবং ২০২৪—এই তিনটি অধ্যায় বাংলাদেশের রাজনীতির ভিত্তি। যারা একাত্তরের গণযুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল, তারা যেন আজ স্পষ্টভাবে নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থান ব্যাখ্যা করে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে সাহায্য করে।”

চলমান আন্দোলনের পটভূমিতে এনসিপি মনে করছে, ‘চব্বিশের অভ্যুত্থান’ বাস্তবায়নে যারা নির্যাতিত-নিপীড়িত অবস্থান থেকে অংশ নিয়েছেন, তাদেরকে ‘বাংলাদেশপন্থি’ অবস্থানে থেকেই ভবিষ্যৎ গঠনে অবদান রাখতে হবে। পূর্বের রাজনৈতিক বিভাজনের ইতিহাস থাকলেও, এখন দায়িত্বশীল আচরণের মাধ্যমে ঐক্যের পথে হাঁটা জরুরি বলে মত প্রকাশ করে দলটি।

বিবৃতির শেষাংশে বলা হয়, “বাংলাদেশের জনগণের বৃহত্তর ঐক্য ছাড়া মুজিববাদকে পরাজিত করা সম্ভব নয়। সুতরাং দেশের ভবিষ্যৎ শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য সকল পক্ষের দূরদর্শী সিদ্ধান্ত ও দায়িত্বশীল আচরণ এখন অত্যন্ত প্রয়োজন।”

উল্লেখ্য, জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক দলের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকার সম্প্রতি আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এই ঘোষণার আগে তিনদিন ব্যাপী ব্যাপক ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলে। আন্দোলনের সময় কিছু ‘আপত্তিকর’ স্লোগান উঠে আসে যা নিয়ে সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্ক ছড়িয়ে পড়ে। এই পরিপ্রেক্ষিতেই এনসিপি আজকের বিবৃতি প্রকাশ করে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করলো।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *