দীর্ঘ আলোচনা ও টানাপোড়েনের পর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) (IMF)–এর সঙ্গে অবশেষে সমঝোতায় পৌঁছেছে বাংলাদেশ সরকার। দুই প্রধান শর্ত আংশিকভাবে বাস্তবায়নে সম্মতি দেওয়ার পর আইএমএফ আগামী জুনের মধ্যেই ঋণের দুটি কিস্তিতে ১৩০ কোটি ডলার ছাড় করতে যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও অর্থনৈতিক সূত্রগুলো এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
কী নিয়ে সমঝোতা?
আইএমএফের সঙ্গে আলোচনায় মূলত দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ছাড় দেওয়া হয়েছে:
1. ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার আরও নমনীয় করা হবে, অর্থাৎ ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতিকে আরও শিথিল করা হবে।
2. রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধির পরিবর্তে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) (NBR)–এ বড় ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার আনা হয়েছে।
সূত্র জানায়, আইএমএফ শুরুতে সরাসরি রাজস্ব বাড়ানোর চাপ দিলেও পরে এনবিআর সংস্কারেই সন্তুষ্ট হয়। এই সংস্কারের আওতায় এনবিআরকে ভেঙে দুটি স্বতন্ত্র সংস্থা গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে—একটি কর নীতি প্রণয়ন করবে, অপরটি কর ব্যবস্থাপনা দেখভাল করবে। সরকার আশা করছে, এই ব্যবস্থায় রাজস্ব আহরণে গতি আসবে।
ডলারের বিনিময় হার কতটা বাড়তে পারে?
বর্তমানে চালু থাকা ক্রলিং পেগ পদ্ধতিতে টাকার মধ্য দর ১১৯ টাকা, যার সঙ্গে ±২.৫% ওঠানামার সুযোগ রয়েছে। অর্থাৎ ডলারের দাম সর্বোচ্চ ১২২ টাকা পর্যন্ত উঠতে পারে। ইতিমধ্যে বাজারে ডলারের দাম সেই সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছেছে।
আইএমএফ এখন এই সীমা ৪ শতাংশে উন্নীত করার প্রস্তাব দিয়েছে। এতে সর্বোচ্চ দর হবে ১২৩.৭৬ টাকা এবং সর্বনিম্ন দর ১১৪.২৪ টাকা। যদিও ডলারের দাম কমার ইতিহাস খুবই বিরল, বাস্তবে এটি আরও বাড়ার সম্ভাবনা বেশি বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
ঋণ দেরি, আলোচনার দীর্ঘসূত্রতা
প্রসঙ্গত, আইএমএফের মোট ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ প্যাকেজ থেকে ইতিমধ্যে তিন কিস্তিতে ১৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। চতুর্থ কিস্তি ডিসেম্বর ২০২৩–এ পাওয়ার কথা ছিল। তবে শর্ত পূরণ না হওয়ায় সেটি স্থগিত করে আইএমএফ। পরে ফেব্রুয়ারি, মার্চ এমনকি এপ্রিলেও ঋণ ছাড় হয়নি।
শেষ পর্যন্ত মে মাসে ওয়াশিংটন ও অনলাইনে একাধিক দফায় আলোচনার পর দুই পক্ষ কিছুটা ছাড় দিয়ে সমঝোতায় পৌঁছে। এখন অপেক্ষা শুধু আইএমএফ নির্বাহী বোর্ডের অনুমোদনের। এটি জুনের মধ্যে হয়ে যাবে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে।
আইএমএফের ঋণ শুধু টাকা না, বার্তা
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, “এই ঋণ ডলার সংকট মেটাতে নয়, বরং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার বার্তা দিতেই নেওয়া হচ্ছে। আইএমএফ যেহেতু গভীর বিশ্লেষণ করেই ঋণ দেয়, এটি পেলে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে।”
আজ (মঙ্গলবার) কেন্দ্রীয় ব্যাংকে এ নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলন হওয়ার কথা রয়েছে। ব্যাংকের গভর্নর সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে অনলাইনে এতে যুক্ত হবেন। তিনি বর্তমানে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আলোচনা করতে আমিরাতে অবস্থান করছেন।
সরকারের উচ্চ পর্যায়ে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে এই সমঝোতা হয়েছে বলেও জানা গেছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, ডলারের দাম বাড়ানো হলেও তা বাজারে হঠাৎ করে অস্বাভাবিকভাবে বাড়বে না—এমন ব্যবস্থাই নেওয়া হয়েছে।