ঢাকায় আসছে ৪০০ ইলেকট্রিক বাস, ২,৫০০ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে

রাজধানী ঢাকায় যানজট ও বায়ুদূষণ কমাতে এবার বড় পরিসরে চালু হতে যাচ্ছে ইলেকট্রিক বাস সেবা। এ লক্ষ্যে ২,৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়-এ। প্রস্তাব অনুযায়ী, ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (DTCA) ৪০০ বিদ্যুৎচালিত বাস কিনবে এবং তিনটি স্থানে চার্জিং স্টেশন ও বাস ডিপো নির্মাণ করা হবে।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ থেকে পাঠানো এই প্রকল্পটি ১৯ মে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) বৈঠকে উত্থাপন করা হবে। প্রস্তাব অনুযায়ী, বাসগুলো চলবে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে। বিশ্বব্যাংক এ প্রকল্পে ২,১৩৫ কোটি টাকা ঋণ দেবে এবং বাকি ৩৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ভার বহন করবে বাংলাদেশ সরকার।

প্রকল্পটি ২০২৫ সালের জুলাই থেকে শুরু হয়ে ২০৩০ সালের জুনে শেষ হবে। এই সময়ের মধ্যে তৈরি করা হবে পূর্বাচল, ঝিলমিল ও কাঁচপুরে তিনটি চার্জিং ডিপো। শুরুতে ডিপো গড়ে তোলা হবে পূর্বাচলে ডিটিসিএর ১.৩ একর জায়গায়। এই উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য সহযোগী সংস্থা হিসেবে কাজ করবে বিআরটিএ এবং পরিবেশ অধিদপ্তর।

প্রকল্পের আওতায় শুধু বাস কেনাই নয়, বৈদ্যুতিক বাসের নীতিমালা প্রণয়ন, অবকাঠামো উন্নয়ন, ইন্টেলিজেন্ট ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম চালু এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির দিকেও নজর দেওয়া হবে।

বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত ‘বাংলাদেশ ক্লিন এয়ার (বিসিএপি) ফেজ ওয়ান’ প্রকল্পের অংশ হিসেবে এই উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তর পরিবেশগত দিকগুলো দেখবে, বিআরটিএ পরিবহন খাতের গুণগত মান নিশ্চিত করবে এবং ডিটিসিএ ই-বাস চালুর মূল দায়িত্ব পালন করবে।

প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ঢাকার বায়ুদূষণ কমানো, যানজট হ্রাস, টেকসই নগর পরিবহন গড়ে তোলা এবং গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাসের লক্ষ্যেই এই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।

তবে, পাঁচ বছর পর এই বাসগুলোর অপারেশনাল খরচ কে বহন করবে, সেটি এখনো স্পষ্ট নয়। সরকার ভর্তুকি দেবে কিনা, সে সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়নি। এতে করে ভবিষ্যতে প্রকল্পটি আর্থিকভাবে টেকসই হবে কিনা, সে প্রশ্ন উঠেছে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মধ্যে।

এই প্রসঙ্গে পরিবহন বিশ্লেষক ও বুয়েট-এর পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. শামসুল হক বলেন, “কী কারণে নগর পরিবহন কার্যকর হচ্ছে না, তা না বুঝে আবার নতুন বিনিয়োগ করাটা খারাপ দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়াবে। বিনিয়োগ ছাড়া বাস চালানোর মডেল থাকা সত্ত্বেও আমরা ব্যয়বহুল প্রকল্পে যাচ্ছি, এতে জনগণের অর্থের অপচয় ঘটতে পারে।”

নগরবাসীর জন্য ইলেকট্রিক বাস চালুর ভাবনা নিঃসন্দেহে যুগোপযোগী এবং পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ। তবে বাস্তবায়নের সময় আর্থিক স্বচ্ছতা, নীতিগত জবাবদিহি ও পরিবহনখাতের বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনায় না নিলে এটিও অতীতের মতো ব্যর্থ প্রকল্পে পরিণত হতে পারে বলে আশঙ্কা বিশ্লেষকদের।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *