গোলাম আযমকে নিয়ে বিতর্কিত স্লোগান, দায় এড়িয়ে সাফাই গাইলেন ছাত্রশিবির নেতা নুরুল ইসলাম সাদ্দাম

গোলাম আযমের নামে দেওয়া বিতর্কিত স্লোগানের ঘটনায় সংগঠনের দায় স্বীকার না করে উল্টো বক্তব্য ঘুরিয়ে বিতর্ক উসকে দিলেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির (Bangladesh Islami Chhatra Shibir) এর কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল নুরুল ইসলাম সাদ্দাম (Nurul Islam Saddam)। সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে তিনি দাবি করেন, কেউ ‘আবেগের বশবর্তী হয়ে’ স্লোগান দিয়ে থাকতে পারেন, তবে ছাত্রশিবির কখনোই কোনো প্রোগ্রামে এ ধরনের স্লোগানের অনুমোদন দেয় না।

তার এই মন্তব্য অনেকের কাছে দায়িত্ব এড়ানোর কৌশল বলেই মনে হয়েছে। কারণ, স্লোগানটি যাদের মুখে শোনা গেছে, তারা জামায়াত-শিবির ঘরানার পরিচিত মুখ, এবং ঘটনাটি কোনো এলোমেলো জনসভায় নয়, বরং সংগঠনের ছায়ায় অনুষ্ঠিত একটি জমায়েতে ঘটে। কিন্তু এরপরও সাদ্দাম ‘কারা দিয়েছে তা জানি না’ বলে বক্তব্য শেষ করেন।

তিনি বলেন, “আমাদের কোনো কর্মসূচিতে কোনো ব্যক্তির নামে স্লোগান দেওয়া হয়নি, তার প্রমাণ পাবেন না।” অথচ গোলাম আযমের মতো বিতর্কিত নেতার নামে স্লোগান উচ্চারিত হওয়ার পর ছাত্রশিবিরের তরফ থেকে প্রথম প্রতিক্রিয়া আসতে এতটা সময় লাগা, এবং এখনো কোনো স্পষ্ট তদন্ত প্রতিবেদন না থাকা—এসব প্রশ্ন তোলে সংগঠনটির দায়বোধ ও রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে।

তার বক্তব্যে একদিকে যেমন অতীত ইতিহাসকে এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়, অন্যদিকে তিনি গোলাম আযমকে “বাংলাদেশের স্বীকৃত নাগরিক” হিসেবে উল্লেখ করে যেন এক ধরনের লিগ্যাল বা নৈতিক বৈধতা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, “রাষ্ট্রপতি তাকে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। তিনি জামায়াতে ইসলামীর আমির ছিলেন।”

এমন বক্তব্যে গোলাম আযমের যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ ও সামাজিক প্রতিক্রিয়ার কথা পুরোপুরি উপেক্ষিত থাকে। শুধু আবেগের কথা বলে বিষয়টি গৌণ করে তোলার চেষ্টা স্পষ্ট। তিনি আরও বলেন, “এই বাংলা গোলাম আযম, শেখ মুজিব বা জিয়াউর রহমানের নয়—এই বাংলা সাধারণ মানুষের।” এই কথার আড়ালে তিনি যেন কোনো পক্ষকে কটাক্ষ না করে নিজের অবস্থান নিরপেক্ষ দেখাতে চান, অথচ বাস্তবতা বলছে, ছাত্রশিবির বরাবরই একটি রাজনৈতিক আদর্শে আস্থাশীল সংগঠন হিসেবে পরিচিত।

আরও বিস্ময়কর বিষয় হলো, সাদ্দাম দাবি করেন, “এখনও আমরা জানতে পারিনি কারা স্লোগান দিয়েছে।” এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর ইস্যুতে সংগঠনের পক্ষ থেকে বিস্তারিত তদন্ত না হওয়া এবং ‘জানা যায়নি’ ধরনের মন্তব্যে স্পষ্ট হয়ে যায়—প্রয়োজনীয় সদিচ্ছার অভাব আছে, অথবা কিছু ‘জানা’ হলেও তা গোপন রাখা হচ্ছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি কেবল একটি ‘কৌশলগত দায় এড়িয়ে যাওয়া’ নয়, বরং একধরনের ছলচাতুরী, যা ছাত্রশিবিরের মতো একটি আদর্শিক সংগঠনের পক্ষ থেকে আসা আরও হতাশাজনক। জাতীয় ও রাজনৈতিক ইতিহাসকে সযত্নে এড়িয়ে গিয়ে কেবল আবেগের দোহাই দিয়ে ব্যাখ্যা দেওয়া—তা যেমন সাধারণ মানুষের বোধগম্যতার বাইরে, তেমনি এটিকে দায়িত্বশীল রাজনৈতিক বক্তব্য বলা যায় না।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *