জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার কাজ কেবলমাত্র জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের নয়: ড. আলী রীয়াজ

জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলার কাজ শুধু জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ওপর নির্ভর করে না—এটি রাজনৈতিক দল, সিভিল সোসাইটি ও অন্যান্য রাজনৈতিক শক্তির সম্মিলিত দায়িত্ব বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি ড. আলী রীয়াজ (Ali Riaz)। রোববার (১৮ মে) সকাল সাড়ে ১০টায় সংসদ ভবনের এলডি হলে অনুষ্ঠিত জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বর্ধিত বৈঠকের প্রারম্ভিক বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, “সংস্কার ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কিছু বিষয়ে মতপার্থক্য থাকলেও, আমরা আশা করছি আলোচনার মাধ্যমে সেইসব জায়গায়ও ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারব। আমরা চাই দ্রুত একটি জাতীয় সনদের দিকে এগিয়ে যেতে।”

বৈঠকে অংশ নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের (Syed Abdullah Mohammad Taher) বলেন, “এখনো নির্বাচন উপযোগী পরিবেশ তৈরি হয়নি। নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা ও কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।” তিনি অভিযোগ করেন, সুস্পষ্ট টাইমলাইন না থাকায় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। “আমরা নির্বাচন চাই, তবে তার আগে প্রয়োজন সুনির্দিষ্ট সংস্কার,” বলেন তিনি।

এই বৈঠকে জামায়াতের ১১ সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নেয়। আলোচনা হয় পাঁচটি সংস্কার কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে, যা নিয়ে আগেও গত ২৬ এপ্রিল এক দফা বৈঠক হয়েছিল। তবে সেই বৈঠকে সব সুপারিশ নিয়ে আলোচনা সম্পন্ন হয়নি।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান। সঞ্চালনায় ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।

জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে আলোচনায় ছিলেন দলের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি এ টি এম মাসুম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, ড. হামিদুর রহমান আযাদ, অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, সাইফুল আলম খান মিলন, অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ এবং বিশিষ্ট আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।

আলী রীয়াজ বলেন, “অনেক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, কোথাও কোথাও মতভিন্নতা রয়ে গেছে। এসব বিষয়ে আমরা দলগুলোর নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে পুনরায় সংলাপ চালিয়ে যাব।” তিনি আরও বলেন, “এই আলোচনা সহজ ছিল না। আমরা এই আলোচনার টেবিলে আসতে বহু ত্যাগ স্বীকার করেছি। অনেকে প্রাণ দিয়েছেন, রক্ত ঝরেছে। সেই আত্মত্যাগ যেন বৃথা না যায়, সেটিই আমাদের লক্ষ্য।”

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, “যত দ্রুত সম্ভব আমরা প্রাথমিক আলোচনার ধাপ শেষ করে দ্বিতীয় পর্যায়ের দিকে যেতে চাই। মতপার্থক্য থাকা সত্ত্বেও আলোচনা চলছে আন্তরিকতার সঙ্গে। আমরা বিশ্বাস করি, সর্বস্তরের প্রচেষ্টায় জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা সম্ভব।”

প্রসঙ্গত, গত ২০ মার্চ সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ও দুই কক্ষের সংসদ গঠনের প্রস্তাব দিয়ে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে লিখিত সুপারিশ জমা দেওয়া হয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *