নানা চাপ ও প্রলোভোনেও দ্রুত নির্বাচনের বিষয়ে অনড় সেনাপ্রধান ওয়াকার

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নির্বাচন ঘিরে সেনাবাহিনীর অবস্থান ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে উঠছে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা — ডিসেম্বরেই নির্বাচন ও ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারিতে নতুন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ- এমন অবস্থানেই তারা অনড় বলে জানা গেছে অনেক গুলো সূত্র থেকে। এই পটভূমিতে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার (General Waqar)-এর ভূমিকা এবং দৃঢ় অবস্থান এখন রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।

সামরিক মহলের একাধিক সূত্র ও ঘনিষ্ঠ পর্যবেক্ষকদের মতে, সেনাপ্রধান ওয়াকারের ওপর নানা দিক থেকে চাপ ও প্রলোভন থাকলেও তিনি এখন পর্যন্ত নিজের অবস্থান থেকে সরে যাননি। দ্রুত এবং সময়মতো নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা নির্বাচিত সরকারের হাতে হস্তান্তরের প্রশ্নে তিনি অনড় রয়েছেন।

এক সাম্প্রতিক দরবারে জেনারেল ওয়াকার স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, সেনাবাহিনী চায় নির্বাচন ডিসেম্বরেই হোক এবং ১ জানুয়ারি নতুন সরকার দায়িত্ব নিক। সেখানে তিনি আরও বলেন, নির্বাচন পদ্ধতি বা সংস্কার নিয়ে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সরকারকে পরামর্শ দেওয়া হলেও তা উপেক্ষিত হয়েছে।

এই অবস্থানকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক বিভাজন আরও স্পষ্ট হচ্ছে। সেনাবাহিনীর এই দৃঢ় ভূমিকাকে কেউ কেউ স্বাগত জানালেও, অন্য পক্ষ এটিকে রাজনৈতিক অবস্থান হিসেবে দেখছে এবং সমালোচনা করছে। যদিও সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে সরাসরি কোনো মন্তব্য আসেনি, তবে অভ্যন্তরীণ স্তরে সেনাবাহিনীর অবস্থান পরিষ্কার বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

এদিকে সেনাবাহিনীর অবস্থানের বিরোধিতা করা কিছু গোষ্ঠী সম্পর্কে অভিযোগ উঠেছে যে তারা মূলত অরাজকতা চায় এবং তাদের কর্মকাণ্ড ভারতের কৌশলগত স্বার্থের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। এসব গোষ্ঠীকে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ বলেও অভিহিত করা হয়েছে।

নির্বাচন না হলে দেশে বিশৃঙ্খলা ও অস্থিরতার সুযোগে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এবং ভারতের ‘ঘনিষ্ঠ মহল’ আরও সক্রিয় হতে পারে—এমন আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন কিছু রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক। তাদের মতে, নির্বাচন ঠেকিয়ে একটি প্রলম্বিত অন্তর্বর্তী অবস্থা তৈরির মধ্য দিয়েই এসব গোষ্ঠী লাভবান হওয়ার চেষ্টা করছে।

সব মিলিয়ে ডিসেম্বর-জানুয়ারির ভোট ও ক্ষমতা হস্তান্তরের নির্ধারিত সময়সীমা এখন শুধুই প্রশাসনিক প্রশ্ন নয়; এটি হয়ে উঠেছে সামরিক ও রাজনৈতিক বলয়ের মুখোমুখি অবস্থানের প্রতীক। এই প্রেক্ষাপটে সেনাপ্রধান ওয়াকারের অবস্থান তাকে ইতিহাসে একটি ভিন্ন মাত্রা দিতে পারে—নির্বাচনের ধারাবাহিকতা রক্ষার পক্ষে কঠিন সময়েও অনমনীয় থাকার জন্য।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *