রাজনীতিতে চলমান অস্থিরতার আবহে এক নাটকীয় মোড়—আজ শনিবার (২৪ মে) দুপুরে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের ১৯ সদস্যকে নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস (Muhammad Yunus)। বৈঠকটি একনেক সভা শেষ হতেই হঠাৎ করে শুরু হয়, যা রাজনৈতিক মহলে নতুন করে উত্তাপ ছড়িয়েছে।
শনিবার বেলা ১১টায় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শুরু হয়, যেখানে মোট ১০টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। এই সভা শেষ হয় দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে, ঠিক তার পরপরই শুরু হয় উপদেষ্টা পরিষদের এই অনির্ধারিত বৈঠক। এনইসি সম্মেলনকক্ষ ঘিরে ছিল ব্যতিক্রমী সতর্কতা—সেখানে ১৯টি পতাকাবাহী গাড়ির উপস্থিতি ইঙ্গিত দেয় বৈঠকের গুরুত্ব ও অংশগ্রহণকারীদের ওজন।
সভাসূত্রে জানা গেছে, এই রুদ্ধদ্বার বৈঠকে শুধুমাত্র উপদেষ্টারাই উপস্থিত ছিলেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব, পরিকল্পনা সচিবসহ অন্য সরকারি কর্মকর্তাদের সভা শেষ হতেই বেরিয়ে যেতে দেখা গেছে, যা এই আলোচনার গোপনীয়তা নিশ্চিত করে।
এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের প্রেক্ষাপটে উঠে এসেছে একটি বড় প্রশ্ন—অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান অধ্যাপক ইউনূস কি সত্যিই পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন? গত বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের নিয়মিত বৈঠকে একটি অনির্ধারিত আলোচনায় তিনি তার পদত্যাগের ইঙ্গিত দেন। রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমে বাধা, দলগুলোর মধ্যে ঐক্যমতের অভাব, এবং রাস্তায় চলমান আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে তিনি ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেন। তার এই মনোভাব বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকেই রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোড়ন তোলে।
বিশেষ করে বিএনপি ও জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে অধ্যাপক ইউনূসের পদত্যাগের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। সূত্র জানায়, কেউই চান না তিনি পদত্যাগ করুন; বরং দলগুলো তার কাছ থেকে জাতীয় নির্বাচনের একটি নির্দিষ্ট সময়সূচি চায়।
এই প্রেক্ষাপটে আজ বিকালেই বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে পৃথক বৈঠকে বসার কথা রয়েছে অধ্যাপক ইউনূসের। ধারণা করা হচ্ছে, তার পদত্যাগের ভাবনা বা ভবিষ্যৎ করণীয় ঠিক করতেই চলছে এই রুদ্ধদ্বার বৈঠক।
এই নাটকীয় ঘটনার পেছনে আরও একটি তাৎপর্যপূর্ণ ইঙ্গিত রয়েছে—গত বুধবার ঢাকা সেনানিবাসে অনুষ্ঠিত ‘অফিসার্স অ্যাড্রেস’ অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান (General Waqar Uz Zaman) যে বক্তব্য দেন, তাতে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়টি স্পষ্টভাবে উঠে আসে। এ বক্তব্য পরোক্ষভাবে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ তৈরি করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পুরো পরিস্থিতি এখন এক ধরনের অনিশ্চয়তায় মোড় নিচ্ছে। অধ্যাপক ইউনূসের পদত্যাগ করলে অন্তর্বর্তী সরকারের ভবিষ্যৎ কী হবে, কিংবা নির্বাচন আয়োজনের দায়ভার কে নেবে—এসব প্রশ্নে জনমনে উদ্বেগ বাড়ছে।