নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশে থাকা কয়েকটি বিতর্কিত ধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিট আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদালত মনে করছে, সুপারিশগুলো এখনো বাস্তবায়নের পর্যায়ে যায়নি—ফলে রিটটি সময়ের আগেই করা হয়েছে এবং এই পর্যায়ে তা গ্রহণযোগ্য নয়।
সোমবার (২৬ মে) বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, “এই মুহূর্তে সুপারিশ বাস্তবায়িত হয়নি। একে কেন্দ্র করে রিট দায়ের করা হয়েছে, যেটি প্রি-ম্যাচিউড। যখন সরকার বাস্তবায়নে যাবে, তখন রিটকারী চাইলে ফের আদালতের শরণাপন্ন হতে পারবেন।”
রিটকারী আইনজীবী রওশন আলী (Rowshan Ali) আদালতে শুনানিতে অংশ নেন। কমিশনের পক্ষে শুনানি করেন ফাওজিয়া করিম ফিরোজ (Fawzia Karim Firoz)।
উল্লেখ্য, গত ১৯ মে এই রিটের শুনানি শেষ হয় এবং আদালত আদেশের জন্য ২৬ মে দিন ধার্য করেছিলেন। রিটের মূল বিষয় ছিল নারী সংস্কার কমিশনের ‘উইমেন রিফর্ম কমিশন রিপোর্ট, ২০২৫’-এ অন্তর্ভুক্ত কিছু সুপারিশ, যেগুলো নিয়ে দেশে নানা বিতর্ক ও মতবিরোধ দেখা দিয়েছে।
৩১৮ পৃষ্ঠার এই রিপোর্টে উল্লিখিত কয়েকটি সুপারিশ নিয়ে আপত্তি তোলেন আইনজীবী রওশন আলী। তিনি বলেন, “রিপোর্টের অধ্যায় ৩, ৪, ৬, ১০, ১১ ও ১২-তে থাকা সুপারিশগুলো ইসলামী শরীয়তের পরিপন্থি, জনগণের ধর্মীয় অনুভূতি ক্ষুণ্ণ করে এবং সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।”
রিপোর্টের বিতর্কিত প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে:
-
সমান উত্তরাধিকার (Equal Inheritance): রিপোর্টের অধ্যায় ১১-তে পুরুষ ও নারীর জন্য সমান উত্তরাধিকার দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে, যা সরাসরি কোরআনের সুরা নিসা (৪:১১)-এর ব্যাখ্যার সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে দাবি করা হয়।
-
বহুবিবাহ নিষিদ্ধকরণ: ইসলামী শরীয়তে অনুমোদিত হওয়া সত্ত্বেও বহুবিবাহ নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব এসেছে, যা সংবিধানের ৪১ অনুচ্ছেদের ধর্মচর্চার স্বাধীনতাকে খর্ব করে বলে রিটে বলা হয়।
-
“My Body, My Choice” স্লোগান: শরীয়তের বাইরে গিয়ে এই স্লোগানকে অন্ধভাবে সমর্থন দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়, যা রিটকারীর মতে নৈতিকতার সীমা অতিক্রম করে।
-
যৌনকর্মকে বৈধ পেশা হিসেবে স্বীকৃতি: রিপোর্টে যৌনকর্মকে পেশাগত বৈধতা দেওয়ার প্রস্তাব নিয়ে বলা হয়, এটি ইসলামি মূল্যবোধ ও সংবিধানের ২(ক) ও ২৬ অনুচ্ছেদের পরিপন্থি।
-
লিঙ্গ পরিচয় ও ট্রান্সজেন্ডার ভাষা: লিঙ্গ পরিচয় ও ট্রান্সজেন্ডার সংক্রান্ত ব্যবহৃত ভাষা ধর্মীয় মূল্যবোধে আঘাত হানে বলেও উল্লেখ করা হয়।
এই রিটে নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয় এবং ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি উইমেন রিফর্ম কমিশনের চেয়ারম্যানকে বিবাদী করা হয়।
তবে আদালতের স্পষ্ট ভাষ্য, রিপোর্টটি এখনো শুধুমাত্র সুপারিশ পর্যায়ে রয়েছে এবং সরকার তা বাস্তবায়নে যায়নি। সেই বাস্তবায়ন ছাড়া এটি চ্যালেঞ্জ করার যৌক্তিকতা নেই।