গণতান্ত্রিক পথে ফেরার আহ্বানে সেনাপ্রধানের বক্তব্যে আপত্তি কোথায়—প্রশ্ন আমীর খসরুর

৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সেনাপ্রধানের বক্তব্য নিয়ে দেশের মানুষ আশায় ছিল—এমন মন্তব্য করে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রশ্ন তুলেছেন, “গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফেরার কথা বললে সেনাপ্রধানের বক্তব্যে সমস্যা কোথায়?” তাঁর ভাষায়, সেনাপ্রধানের বক্তব্য বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের প্রেক্ষাপটে ‘ইতিবাচক’ হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত।

আজ সোমবার ঢাকার ডিআরইউ মিলনায়তনে অনলাইন নিউজ পোর্টাল শীর্ষ নিউজ ডটকমের নতুন যাত্রা উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই মন্তব্য করেন খসরু। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পোর্টালের সম্পাদক একরামুল হক।

আলোচনায় আমীর খসরু বলেন, “সংস্কারের কথা আজ যারা বলছেন, তারা যেন ভুলে না যান—সাত বছর আগে বিএনপি-ই এই সংস্কারের কথা বলেছে। আমরা ২৭ দফা দিয়েছিলাম, পরে তা যুগপৎ আন্দোলনের মাধ্যমে ৩১ দফায় পরিণত হয়েছে। এখন যারা এটা বাস্তবায়নের কথা বলছেন, তাঁরা আমাদেরই পথ অনুসরণ করছেন।”

তিনি প্রশ্ন তোলেন, “অন্তর্বর্তী সরকার গঠনে যাঁরা ছাত্রনেতাদের বসিয়েছিলেন, এখন তাঁদের ঐক্য কোথায়? জনপ্রিয়তা ছাড়াই নির্বাচনে যাওয়ার নাটক চলছে, জনগণ সব বুঝে। কেউ যেন একক কৃতিত্ব দাবি করে জাতিকে বিভক্ত না করেন—ইতিহাস ও শহীদদের স্মরণ করতে হবে।”

একই অনুষ্ঠানে তিনি স্মরণ করেন, “জুলাইয়ের গণ–অভ্যুত্থানের পেছনে যারা ছিলেন, তাদের ত্যাগকে মনে রাখা হয় না। মনে হচ্ছে হাসিনার পতনের কৃতিত্ব শুধু কিছু মানুষের মুখে মুখে—‘আনসাং হিরো’দের স্বীকৃতি না দিলে সেটা বিশ্বাসযোগ্য হয় না।”

তিনি এ-ও বলেন, “শেখ হাসিনার সময় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের দেখা পাওয়া দুষ্কর ছিল। হাসিনা না পালালে আজ অনেক রাজনৈতিক নেতার ফাঁসি হতো, কেউ থাকতেন আজীবন জেলে। অথচ উপদেষ্টারা নিশ্চিন্তে নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত ছিলেন।”

অনুষ্ঠানে অন্যান্য বক্তারাও বিভিন্ন পর্যায়ে মন্তব্য করেন সরকারের ব্যর্থতা, গণতন্ত্রহীনতা ও ‘ফ্যাসিবাদী’ শাসনের বিরুদ্ধে।

জামায়াতে ইসলামী নেতৃবৃন্দের পক্ষে সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, “স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও রাজনীতি, শিক্ষা, চিকিৎসা, গণতন্ত্রে কোনো বাস্তব উন্নয়ন হয়নি। এখন ঐক্যের বিকল্প নেই।”

বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইসমাইল জবিউল্লাহ বলেন, “ফ্যাসিবাদের আমলে শুধু প্রিন্ট মিডিয়া নয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও কণ্ঠরোধ চলেছে। আজও সেই দোসররা সক্রিয়।”

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি নেতা সাইফুল হক সরকারকে নিরপেক্ষতার প্রমাণ দিতে বলেন। তিনি অভিযোগ করেন, “কমিশনের দুর্নীতির শ্বেতপত্র থাকলেও কোনো পদক্ষেপ নেই। ছয় মাসে যারা কিছু করতে পারেনি, তারা ছয় বছরেও পারবে না।”

‘অন্তর্বর্তী সরকারের’ ভূমিকায় থাকা ব্যক্তিদের উদ্দেশে সাইফুল হক বলেন, “নিরাপত্তা উপদেষ্টা তিন বাহিনীর ওপর খবরদারি করতে চাইছেন, যা গ্রহণযোগ্য নয়। শুধু মৌখিক প্রতিশ্রুতি নয়, সুনির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে দৃশ্যমান পদক্ষেপ দরকার।”

আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, “ফ্যাসিবাদের সময় রাজনীতিবিদরা অনিশ্চিত জীবনে ছিলেন। এখনো বক্তৃতা দিতে ভয় লাগে—কে কবে রাগ করবে সেই দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়।” তিনি প্রধান উপদেষ্টার সময় ব্যবস্থাপনাতেও খোঁচা দেন, “ফরাসি চিত্রশিল্পীর জন্য এক ঘণ্টা, আর রাজনীতিবিদের জন্য ১০ মিনিট?”

গণ অধিকার পরিষদ নেতা রাশেদ খান বলেন, “সংলাপ হচ্ছে, কিন্তু ফলাফল কিছুই দেখা যাচ্ছে না। সিদ্ধান্ত না নিলে চা–শিঙাড়ার সংলাপের কী দরকার?”

সব বক্তাই বারবার ফিরে আসেন একই প্রশ্নে: সংস্কারের কথা যতই বলা হোক, বাস্তবতা কতটা পাল্টেছে? সরকার ফ্যাসিবাদী চর্চা থেকে কতটা সরে এসেছে? সেনাপ্রধানের বক্তব্য সেই উত্তরণের দিকেই ইঙ্গিত করছে কিনা—তা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও, অনেকের মতে সেটাই হতে পারে নতুন এক রাজনৈতিক বাস্তবতার সূচনা।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *