একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গ টেনে বেগম খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের সদস্যদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে উল্লেখ করে বিতর্কের মুখে পড়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (Jahangirnagar University) উপাচার্য ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান (Mohammad Kamrul Ahsan)। রাজধানীর রমনা ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান (Ziaur Rahman)-এর ৪৪তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (২৯ মে) এক আলোচনা সভায় দেওয়া তাঁর বক্তব্য সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
বক্তব্যে উপাচার্য বলেন, “প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা হচ্ছেন আমাদের মাতা, গণতন্ত্রের মাতা বেগম খালেদা জিয়া। প্রথম শিশু মুক্তিযোদ্ধা হচ্ছে শিশু তারেক, শিশু আরাফাত।” তাঁর এই বক্তব্যের ৪০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ভাইরাল হয় ফেসবুকে। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, সামাজিক মাধ্যমে তার চার মিনিটের একটি বড় সংস্করণও ছড়িয়ে পড়েছে।
বক্তব্যের অন্যান্য অংশেও উপাচার্য কামরুল আহসান শহীদ জিয়ার অবদানের কথা তুলে ধরে বলেন, “একাত্তরের ২৫ মার্চ কালরাত্রিতেই শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তার ব্যাটালিয়নকে নিয়ে শপথ করেছিলেন—আমরা স্বাধীনতার ঘোষণা করব, প্রাণ দেব দেশের জন্য। তাঁর সঙ্গে ৩০০ সৈনিক সে রাতে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। সেই ৩০০ সৈনিকের স্ত্রী ও সন্তানেরা মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় সবার আগে আসার কথা।”
বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, “বাঙালি জাতিকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। তাঁর সততা ছিল প্রশ্নাতীত। মাত্র সাড়ে চার হাজার টাকা বেতন পেতেন, তার মধ্য থেকে ১৫০ টাকা রিলিফ ফান্ডে দিতেন, বাকি দিয়ে সংসার চালাতেন। তাঁর সেই সততা ও আত্মত্যাগই বিএনপিকে আজ এত বড় দলে পরিণত করেছে।”
বক্তব্যটি ঘিরে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক। অনেকে একে ঐতিহাসিক সত্য বিকৃতির চেষ্টা বলছেন, আবার অনেকেই একে রাজনৈতিক বক্তব্য হিসেবে গ্রহণ করছেন।
উল্লেখ্য, এর আগে বিএনপি (BNP) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (Mirza Fakhrul Islam Alamgir) দাবি করেছিলেন, বেগম খালেদা জিয়া একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন এবং পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে বন্দি ছিলেন বলেই এই মর্যাদা প্রাপ্য। একইসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, “আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান একজন শিশু মুক্তিযোদ্ধা; তিনি কারাগারে ছিলেন মায়ের সঙ্গে।”
তবে উপাচার্যের এমন বক্তব্যের বিষয়ে সাংবাদিকরা বারবার ফোন করে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি কোনো কল রিসিভ করেননি।
এই প্রসঙ্গ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে যেমন প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে, তেমনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও চলছে আলোচনা, সমালোচনা আর বিতর্কের ঢেউ।