জুলাই-আগস্ট মাসে সংঘটিত গণহত্যার ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina)-এর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা গতি পেয়েছে। রোববার, ১ জুন, ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগপত্র দাখিল করবে প্রসিকিউশন। একই সঙ্গে, এই বিচারকাজ সরকারি টেলিভিশন বিটিভিতে সরাসরি সম্প্রচারের সম্ভাবনা রয়েছে, জানিয়েছেন প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম (Gazi MH Tamim)।
শনিবার বিকেলে এক ব্রিফিংয়ে তিনি জানান, “কালকের শুনানির অনুমতি পেলে বিটিভির মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হতে পারে।” এই সিদ্ধান্ত, দেশের বিচার ইতিহাসে এক নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই।
এর আগে প্রধান প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম (Mohammad Tazul Islam) জানান, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আগামীকালই দাখিল করা হবে। প্রসঙ্গত, গত ১২ মে তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন, যেখানে জুলাই গণহত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে সরাসরি তার নাম উঠে আসে।
ট্রাইব্যুনাল এই মামলায় গত ১৮ ফেব্রুয়ারি তদন্তের সময়সীমা নির্ধারণ করে দেন। চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদার (Justice Md. Golam Mortuza Mojumdar)-এর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সময়সীমা নির্ধারণ করেন ২০ এপ্রিল পর্যন্ত।
এদিকে অতিরিক্ত চিফ প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম (Mizanul Islam) আদালতে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন। ট্রাইব্যুনাল ২০২৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের (Obaidul Quader) সহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত দুই মামলার তদন্ত দুই মাসের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দিয়েছিল।
আলোচিত এই মামলার পেছনে রয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ভয়াবহ দমনপীড়নের ইতিহাস। শান্তিপূর্ণভাবে দাবি জানানো ছাত্র ও সাধারণ মানুষের ওপর আওয়ামী লীগ সরকারের সময় গুলিবর্ষণ, পরিকল্পিত হত্যা এবং দমনপীড়ন চালানো হয়। অভিযোগ রয়েছে, শেখ হাসিনা সেই সহিংস অভিযানের অন্যতম নির্দেশদাতা ও রূপকার।
এই গণআন্দোলনে প্রায় দেড় হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে। বিশেষ করে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক পালাবদলের সূচনা হয়। এরপর শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Dr. Muhammad Yunus)-এর নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার দেশের দায়িত্ব গ্রহণ করে এবং ওই ভয়াবহ গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করার ঘোষণা দেয়।
এই বিচারপ্রক্রিয়া শুধু দেশের ইতিহাসের এক অন্ধকার অধ্যায়ের হিসাব চাওয়াই নয়, বরং গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের ভবিষ্যৎ নির্ধারণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।