গত ১৬ বছর ধরে বাংলাদেশের জনগণকে সচেতনতা ও শিক্ষার মূলধারার বাইরে রেখে যে ধরনের সেন্সরশিপ চালানো হয়েছে, তার পরিণতি এখন সামনে চলে এসেছে। এই ব্যবস্থায় এক প্রজন্ম বেড়ে উঠেছে যারা বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণ কিংবা কৌশলগত বোঝাপড়া থেকে বঞ্চিত। এরই সুযোগ নিচ্ছেন ড. ইউনুস (Dr. Yunus)—তার বিদেশি বন্ধুদের স্বার্থে, তিনি আজ দেশের জনগণকে সহজেই প্রভাবিত ও বিভ্রান্ত করতে পারছেন।
এটা এমনি এমনি হচ্ছে না। যেমন ইভ্যালি (Evaly) কেলেঙ্কারির মাধ্যমে রাসেলরা সাধারণ মানুষকে একটি “ডিজিটাল কাঁঠাল ভাঙা” স্বপ্ন দেখিয়ে প্রতারণা করেছিল, তেমনি ইউনুসও একইভাবে এই রাষ্ট্রকে একটি ভুয়া কূটনৈতিক ফ্রেমওয়ার্কে ঠেলে দিচ্ছেন।
সবচেয়ে বিপজ্জনক দিক হলো, একটি অস্বীকৃত, নন-স্টেট রেবেল গ্রুপের জন্য একটি আন্তর্জাতিক কোরিডোর ও চ্যানেল তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে, যেটা সরাসরি আঘাত করছে এই অঞ্চলের গ্লোবাল সিকিউরিটি ফ্রেমওয়ার্কে। এই কোরিডোর পরিকল্পনার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে প্রতিবাদ জানিয়েছে চীন (China) এবং মিয়ানমার (Myanmar)। এটি বাংলাদেশের জন্য কেবল একটি কূটনৈতিক বিপদ নয়, বরং একটি কৌশলগত আত্মহত্যা।
২০২৬ সালের জানুয়ারিতে মিয়ানমারে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। প্রশ্ন উঠছে—ইউনুস কি উদ্দেশ্যমূলকভাবে এই নির্বাচনকে সামনে রেখে জুন পর্যন্ত ক্ষমতার ছায়ায় থাকতে চান? একজন সাংবাদিক কি সাহস করবেন তাকে জিজ্ঞেস করতে, কেন তিনি জুন পর্যন্ত থেকেই কিছু করতে চান? ঠিক কী এমন পরিকল্পনা তার আছে, যার জন্য তিনি এই সময়টুকু ধরে রাখতে মরিয়া?
চীন নেতৃত্বাধীন গ্লোবাল সিকিউরিটি আর্কিটেকচারের তিনটি মূল স্তম্ভ—সার্বভৌমত্ব, টেরিটোরিয়াল ইন্টিগ্রিটি ও সমমর্যাদা—এই কোরিডোর প্রকল্প সরাসরি লঙ্ঘন করছে। এই নিরাপত্তা কাঠামোতে ইতিমধ্যে আসিয়ান (ASEAN), পাকিস্তান, গাল্ফ ও ইউরেশিয়ান অঞ্চল অংশগ্রহণ করেছে। একমাত্র বাংলাদেশই সেই কাঠামোর বাইরে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে, ইউনুসের একতরফা ‘পশ্চিমঘেঁষা’ পররাষ্ট্রনীতির কারণে।
এশিয়ার একমাত্র নির্ণায়ক পরাশক্তি হিসেবে চীন নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। ভারত ও পাকিস্তানের সাম্প্রতিক সংঘাতে দেখা গেছে, চীনের সহায়তায় পাকিস্তান কিভাবে এয়ারফোর্স ও রকেট ফোর্স ব্যবহার করে ভারতের একাধিক বেইসে নিখুঁত মিসাইল স্ট্রাইক চালিয়ে ভারতের বিমানবাহিনীকে কার্যত অচল করে দিয়েছে। ভারতের S-400 রাডার ব্যবস্থাও এর শিকার হয়েছে। পাকিস্তান এখন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে—জেনারেল আসিম মুনিরকে ফিল্ড মার্শাল পদে উন্নীত করা হয়েছে, যেটা যুদ্ধের সরাসরি পূর্বাভাস।
বিশ্লেষক প্রাভিন সোহন (Pravin Sawhney) বলছেন, পাকিস্তান আগামী ৬-১২ মাসের মধ্যে অপারেশনাল গ্যাপ পূর্ণ করে ফেলবে, এবং সম্ভবত হামলার মাধ্যমে এগিয়ে যাবে। চীন এর মধ্যেই তাদের সর্বাধুনিক J-35A ফাইটার জেট পাকিস্তানকে হস্তান্তর করেছে, যেন তারা ফিল্ড টেস্ট করতে পারে। আক্রমণের লক্ষ্য হতে পারে ইন্দাস ভ্যালির পানি এবং কাশ্মির সমস্যার চূড়ান্ত সমাধান।
কাশ্মির সমস্যা সমাধানে চীন একমাত্র পরাশক্তি যাদের আছে বৈশ্বিক কাঠামো, সামরিক সক্ষমতা এবং কূটনৈতিক অবস্থান। চীন এখন সিঙ্গাপুর থেকে একটি নতুন গ্লোবাল মিডিয়েশন বডি গঠন করেছে, যার সদস্য ২০টি দেশ—পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, কুবা, সার্বিয়া প্রভৃতি। এই সংস্থা পশ্চিমা ধাঁচের আদালতের মত নয়, বরং “উইন-উইন” ভিত্তিক আলোচনা ও সমঝোতা চায়।
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জন্য চূড়ান্ত হুমকি হলো ইউনুসের নেতৃত্বে আমাদের বিদেশনীতি এমন এক পথে এগোচ্ছে, যেখানে বাংলাদেশ নিজেই তার প্রাকৃতিক মিত্র—চীন, আসিয়ান ও গাল্ফ—থেকে আলাদা হয়ে যাচ্ছে। এই বিচ্ছিন্নতা আমাদের দক্ষিণ এশিয়ার ‘ইউক্রেন’ বানিয়ে দেবে—যেখানে আমাদের সার্বভৌমত্ব থাকবে শুধুমাত্র নামেমাত্র, কিন্তু বাস্তবে আমরা হয়ে যাবো পশ্চিমা শক্তির কলোনি।
ভারতের কাশ্মির নীতিতে চীন যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, তা স্পষ্ট। চীন আলোচনার প্রস্তাবের পরিবর্তে এখন পাকিস্তানের সঙ্গে দৃঢ় কৌশলগত অংশীদারিত্ব গড়ে তুলেছে, যার ফলাফল দেখা গেছে “অপারেশন বুনিয়ান আল-মারসুস” ও “অপারেশন ইন্দুরে”—যেখানে ২৬টি ভারতীয় বেইসে হামলা ও মাত্র ২৪ ঘণ্টায় ৬টি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হয়েছে।
আমরা চোখের সামনেই দেখছি, কীভাবে আমেরিকার হয়ে কাজ করে ভারত এখন পরাজিত, অনুন্নত ও আন্তর্জাতিকভাবে কোণঠাসা। ইউনুস বাংলাদেশকেও সেই একই পথে নিচ্ছেন। বিএনপি নেতারা জানেন—এই সব হচ্ছে তার ইউরোপীয় ও আমেরিকান বন্ধুদের স্বার্থে। দেশের সেনাবাহিনীকেও যুদ্ধ প্রস্তুতির বার্তা দেওয়া হচ্ছে। প্রশ্ন হলো—কার জন্য এই প্রস্তুতি?
এই একতরফা নীতি আমাদের সবচেয়ে মূল্যবান উন্নয়ন অংশীদারদের—চীন, আসিয়ান, গাল্ফ—থেকে বিচ্ছিন্ন করছে। যেখানে এই দেশগুলো একত্রে নতুন যুগের সিল্করুট ও গ্লোবাল অবকাঠামো নির্মাণে নেতৃত্ব দিচ্ছে, বাংলাদেশ সেখানে ‘প্রতিবেশীর বিচ্ছিন্নতাবাদীদের’ সহায়তা করে নিজেদের বিরুদ্ধে প্রতিবেশীকেই লেলিয়ে দিচ্ছে।
এই নীতির শেষ পরিণতি কী? আমরা কি ভারতের মত পরাজিত, অনুন্নত ও একঘরে হতে চাই? নাকি সময় এসেছে, ভ্রান্ত পথ থেকে সরে এসে আমাদের প্রকৃত মিত্রদের সাথে কৌশলগত বন্ধুত্ব গড়ে তোলার?
অনলাইন একটিভিষ্ট আর জাহাঙ্গীরের ফেসবুক পোষ্ট থেকে সংকলিত