‘পর্দার অন্তরালে’র আসন সমঝোতা নিয়ে আটকে আছে ‘নির্বাচনী রোডম্যাপ’!

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ এখনো প্রকাশ না হওয়ার পেছনে বড় কারণ হিসেবে উঠে এসেছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি (BNP)-র সঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়ে চলমান অনানুষ্ঠানিক আলোচনার অভিযোগ। তবে এসব অভিযোগকে ভিত্তিহীন দাবি করে পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন জামায়াত (Jamaat-e-Islami) ও জাতীয় নাগরিক পার্টি—এনসিপি (National Citizens’ Party – NCP) নেতারা।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘ঠিকানা’-এর একটি টকশোতে এক সময়ের জামায়াত নেতা এবং বর্তমানে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি (AB Party) চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু দাবি করেন, “বিএনপি জানে তারা নির্বাচনে অংশ নিলে ক্ষমতায় আসার সুযোগ আছে, এজন্য তারা সিরিয়াস। অন্যদিকে এনসিপি এবং জামায়াত বিএনপির সঙ্গে পর্দার অন্তরালে সিট নেগোসিয়েশনে জড়িয়েছে।”

মঞ্জু আরও বলেন, “জামায়াত একটা শক্তিশালী দল হলেও নির্বাচনী অংশগ্রহণে তাদের পিছুটান আছে। কিন্তু যদি বিএনপি জামায়াতকে ৫০টি আসন দিয়ে দেয়, তাহলে জামায়াত অক্টোবরে নির্বাচন হলেও রাজি হয়ে যাবে।” তার দাবি, এনসিপি পর্যন্ত ৫০ থেকে ৭০টি আসনের দাবি নিয়ে বিএনপির সঙ্গে সমঝোতায় বসেছে।

তবে এসব মন্তব্য সরাসরি অস্বীকার না করে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, “আমরা এখন রোডম্যাপ ঘোষণার অপেক্ষায় আছি। সিট নেগোসিয়েশন এখনো ম্যাচিউর্ড পর্যায়ে পৌঁছায়নি।”

এদিকে, এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক খান মোহাম্মদ মুরসালিন সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, “বিএনপির সঙ্গে আসন ভাগাভাগির প্রশ্নই আসে না। এখন আমরা দলের সাংগঠনিক কাঠামো শক্তিশালী করায় মনোযোগী।”

জামায়াতের একজন ঢাকা মহানগর নেতা বলেন, “একজন হতাশ দলছুট ব্যক্তি যা-খুশি বলতেই পারেন। তবে আমরা এই ধরনের মন্তব্যে ব্যক্তিগতভাবে প্রতিক্রিয়া না জানিয়ে, জনগণের কাছে ম্যাচিউরড অবস্থান তুলে ধরতে চাই।”

এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলীয় সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, “আমরা স্পষ্টভাবে বলছি, বিএনপি বা অন্য কোনো দলের সঙ্গে কোনো সিট ভাগাভাগির সমঝোতা হয়নি। যারা এমন দাবি করছেন, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা অবশ্য একে সহজভাবে দেখছেন না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. নুরুল আমিন ব্যাপারী বলেন, “এনসিপির দুর্নীতির অভিযোগ এবং দুর্বল প্রার্থী কাঠামো তাদের বাধ্য করছে অন্য দলের ব্যাকআপ খোঁজার। বিএনপি যদি মনোনয়ন না দেয়, তখন হয়তো তারাই এনসিপির হয়ে দাঁড়াবে। বিএনপি তো অ্যাবসোলিউট মেজরিটির দিকেই যাচ্ছে।”

অন্যদিকে বিশ্লেষক জাহের উর রহমান বলেন, “মঞ্জু সাহেবের বক্তব্য আগেও গুঞ্জনের মতো শোনা গেছে। কিন্তু এবার দায়িত্বশীলভাবে বলায় বিষয়টি আরেক মাত্রা পেয়েছে।”

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ২০০৯, ২০১৪, এবং ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির মধ্যে নির্বাচনের আগে আসন সমঝোতা হয়েছিল। ২০১৪, ২০১৮, ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে আগেই স্পষ্ট করা হয়েছিল—কোন দল কয়টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। সেই প্রেক্ষাপটে এবারও আসন সমঝোতার আলোচনা স্বাভাবিক হলেও, এটি কতটুকু বাস্তব—তা নিয়ে রয়েছে বিতর্ক।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *