নিজের গুমের অভিযোগ এবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তুললেন সালাহউদ্দিন আহমেদ (Salahuddin Ahmed)। বিএনপি (BNP)-র স্থায়ী কমিটির এই সদস্য মঙ্গলবার (৩ জুন) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে লিখিতভাবে নিজের গুম সংক্রান্ত অভিযোগ জমা দিয়েছেন। এর আগে, ২০২৪ সালের ১৫ অক্টোবর তিনি গুম কমিশনের কাছেও একই অভিযোগ দাখিল করেছিলেন।
অভিযোগ জমা দেওয়ার পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, “গুম-খুনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া শুরু করছি। কিন্তু এ সংক্রান্ত দৃশ্যমান অগ্রগতি না থাকায় আমরা ক্ষুব্ধ। যারা এই জঘন্য অপরাধের সঙ্গে যুক্ত, তাদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।”
তিনি সরাসরি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার (Sheikh Hasina) বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে বলেন, “গুম ও খুনের সঙ্গে জড়িত সকল ব্যক্তির, এমনকি সাবেক প্রধানমন্ত্রীরও বিচার চাই।” তার বক্তব্যে স্পষ্ট ছিল রাজনৈতিক নিষ্পেষণের অভিযোগ এবং বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধাচরণ।
সালাহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, “যারা গুমের ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছেন, তাদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আর যারা এখনো পলাতক, তাদের খুঁজে বের করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।” তিনি জিয়াউল হাসান (Ziaul Hasan)-এর নাম উল্লেখ করে বলেন, “সাবেক এই সেনা কর্মকর্তাসহ যেসব ব্যক্তি গুমে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত, তাদের আইনের আওতায় আনতেই হবে।”
গুম-খুনের সংস্কৃতিকে রাজনৈতিক নিপীড়নের একটি ভয়ঙ্কর অস্ত্র আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, “এই সরকারের দায়িত্ব—সবাইকে আইনের আওতায় আনা এবং দেশ থেকে এই অমানবিক সংস্কৃতি চিরতরে বন্ধ করা।”
নিজের নিখোঁজ হওয়ার বর্ণনা দিতে গিয়ে সালাহউদ্দিন জানান, “২০১৫ সালের ১০ মার্চ রাত সাড়ে ৯টায় উত্তরার একটি বাসা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পোশাকধারী কিছু সশস্ত্র ব্যক্তি আমাকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর ৬১ দিন আমি অজ্ঞাত একটি স্থানে বন্দি ছিলাম। পরে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশের মাধ্যমে আমার অবস্থান প্রকাশ পায়।”
তিনি জানান, গুমের সময় যেই ঘরে তাকে আটকে রাখা হয়েছিল, সেই ঘরের পরিবেশ, আচরণ, প্রতিদিনের ঘটনা—সবই তিনি গুম কমিশনের কাছে লিখিত ও মৌখিকভাবে জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, সালাহউদ্দিন আহমেদ ২০১৫ সালের মার্চে ঢাকা থেকে নিখোঁজ হন। এরপর ১১ মে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলং শহরে তাকে খুঁজে পাওয়া যায়। সে সময় তিনি বৈধ কাগজপত্র ছাড়া ভারতে প্রবেশ করেছেন—এ অভিযোগে ভারতের ফরেনার্স অ্যাক্টে মামলা করা হয়। পরে ২০১৮ সালে স্থানীয় আদালত তাকে খালাস দিলেও, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার আপিল করায় তাকে সেখানেই অবস্থান করতে হয় ।