দেশের রাজনৈতিক মঞ্চে উত্তাপ বাড়ছে জাতীয় নির্বাচন ঘিরে। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন চায় দেশের প্রধান প্রধান বিরোধী দলগুলো। মঙ্গলবার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় এমন দাবি জানান বিএনপিসহ ১৮টি রাজনৈতিক দলের শীর্ষনেতারা। ‘গণহত্যার বিচার, রাষ্ট্র সংস্কার ও নির্বাচনের রোডম্যাপ’ শীর্ষক এই সভায় বক্তারা বলেন, বর্তমান সরকারের সময়ক্ষেপণ ও অস্পষ্ট অবস্থান গণতন্ত্রের পথে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের দাবি, অবিলম্বে একটি নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনকালীন রোডম্যাপ ঘোষণা করুক, না হলে বৃহত্তর আন্দোলনের ঘোষণা আসবে।
সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ (Salahuddin Ahmed) বলেন, “জাতীয় নির্বাচন নিয়ে এখন সার্বজনীন আলোচনা হচ্ছে। তবে বিচার এবং নির্বাচন—এই দুটি আলাদা বিষয়। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া এবং সেটি স্বাধীনভাবে চলবে। বিচারকে অজুহাত বানিয়ে নির্বাচন পেছানো অযৌক্তিক। বিচার একদিকে চলুক, নির্বাচন হোক নির্ধারিত সময়েই।”
তিনি আরও বলেন, “দেশে-বিদেশে অনেকেই অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করেছেন। স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে হলে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর সেটির পথ একটাই—জাতীয় সংসদ নির্বাচন। যত তাড়াতাড়ি সেটি হবে, ততই দেশের মঙ্গল।”
সভায় মাহমুদুর রহমান মান্না (Mahmudur Rahman Manna) প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে তীব্র সমালোচনা করে বলেন, “একটি মাত্র দল নির্বাচন চায়—এ ধরনের বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টা কোনো ব্যাখ্যা দেননি। অথচ বাস্তবতা হলো, অন্তত ২৯টি দল ইতোমধ্যে ডিসেম্বরের মধ্যেই ভোট চেয়েছে। প্রফেসর ইউনূস এমন ভুল করতে পারেন না। অথচ তিনি প্রশ্নের জবাব না দিয়ে মিষ্টি হাসি দিয়ে এড়িয়ে যান—এটি গ্রহণযোগ্য নয়।”
তিনি প্রশ্ন তোলেন, “প্রধান উপদেষ্টা কি ইচ্ছাকৃতভাবেই রাষ্ট্র সংস্কার ও নির্বাচনের বিষয়গুলো এড়িয়ে যাচ্ছেন? জামায়াতে ইসলামীর মতো দল ফেব্রুয়ারিতে ভোট চেয়েছে, কেউ জুনে নয়। তাহলে কেন জুনের প্রাক-মৌসুমি ঝড়ের সময় ভোটের প্রস্তাব? এতে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা আরও বাড়ছে।”
আন্দালিব রহমান পার্থ (Andaleeve Rahman Partho), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান, বলেন, “নির্বাচনই জনগণকে ক্ষমতায়িত করার একমাত্র পথ। নির্বাচন না হলে জনগণ শুধু অধিকার হারায় না, রাজনৈতিক ভারসাম্যও বিনষ্ট হয়। আর এই নির্বাচনই দেশের সবচেয়ে বড় সংস্কার হতে পারে। আপনি (প্রধান উপদেষ্টা) ডিসেম্বরের নির্বাচনের কথা বলেছেন, এখন সেই প্রতিশ্রুতি পালন করুন।”
তিনি আরও প্রশ্ন তোলেন, “আজ সেনাবাহিনীকে কেন সরাসরি কথা বলতে হয়? রাজনৈতিক দূরত্ব সৃষ্টি করেছেন কে? আজ রাজনৈতিক দলগুলো বিভ্রান্ত নয়, বরং বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন আপনি।”
সভাপতির বক্তব্যে নুরুল হক নুর (Nurul Haque Nur), গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি, স্পষ্টভাবে বলেন, “বিচার ও সংস্কারের কথা বলে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কিছু দল নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার পাঁয়তারা করছে—তারা চায় নিজেদের সংগঠিত করে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় লোক বসাতে।”
গণঅধিকার পরিষদের সহসভাপতি ফারুক হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এই সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম, ভাসানী জনশক্তি পার্টির শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ, এলডিপির ড. রেদওয়ান আহমেদ, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের ফওজুল হাকিম, জেএসডির শহীদ উদ্দিন চৌধুরী স্বপন, গণঅধিকার পরিষদের রাশেদ খান, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের ড. গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, খেলাফত মজলিসের অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসেন, গণসংহতি আন্দোলনের আবুল হাসান রুবেল, জাগপার ইকবাল হাসান, এনডিএমের মহাসচিব মমিনুল আমিন প্রমুখ।
সবার কণ্ঠেই ছিল একটি অভিন্ন বার্তা—নির্বাচন হোক ডিসেম্বরেই, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে, যেন জনতার প্রত্যাশা ও গণতন্ত্রের দাবি পূরণ হয়।