মুক্তিযুদ্ধে অবিসংবাদিত নেতৃত্বদানকারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (Sheikh Mujibur Rahman), সৈয়দ নজরুল ইসলাম (Syed Nazrul Islam), তাজউদ্দীন আহমদ (Tajuddin Ahmad) সহ ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিজয়ী চার শতাধিক রাজনীতিকের মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বাতিল করেছে সরকার। মঙ্গলবার (৩ জুন) রাতে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসেলেটিভ ও সংসদ বিভাগ থেকে জারি হওয়া এক অধ্যাদেশে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) (JAMUKA) কর্তৃক জারি করা ওই অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, পূর্ববর্তী যাচাই-বাছাইয়ের আলোকে দেখা গেছে, এসব ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেননি কিংবা নির্ধারিত কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন না। ফলে ‘মুক্তিযোদ্ধা’ নয়, তারা ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে পরিচিত হবেন।
বাতিলের তালিকায় শুধু বঙ্গবন্ধুই নন, রয়েছেন একাধিক প্রভাবশালী মন্ত্রী, সাবেক সংসদ সদস্য, এবং ঐতিহাসিক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বও। সিদ্ধান্তটি জানার পরপরই রাজনৈতিক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
তীব্র প্রতিক্রিয়া ও প্রতিবাদ
মুক্তিযোদ্ধা সংগঠনগুলোর ভাষ্য, শেখ মুজিবের স্বীকৃতি বাতিল করা মুক্তিযুদ্ধ ও জাতির চেতনার বিরুদ্ধে স্পষ্ট আঘাত। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ (Bangladesh Muktijoddha Sangsad)-এর মহাসচিব এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়েছে, তাকে তালিকা থেকে বাদ দেওয়া মানে ইতিহাসকেই মুছে ফেলা।”
তারা মনে করেন, এই সিদ্ধান্ত মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাসকে বিকৃত করার অপচেষ্টা। অনেকেই এটিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেও মনে করছেন।
সরকারের ব্যাখ্যা ও আইনি পথ
অন্যদিকে, আইন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মুক্তিযোদ্ধা তালিকাকে স্বচ্ছ ও নির্ভরযোগ্য রাখতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যেসব ব্যক্তি এই সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্ট, তারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আপিল করতে পারবেন।
অধ্যাদেশ অনুযায়ী, শুধু প্রবাসী সরকার নয়, আরও চার শ্রেণির পূর্ব স্বীকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধাকেও এখন থেকে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে চিহ্নিত করা হবে।
তবে বিতর্ক এখানেই থেমে নেই। বাদপড়া ব্যক্তিরা ইতিমধ্যে উচ্চ আদালতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সূত্র জানায়, সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে চলতি সপ্তাহেই আইনগত লড়াই শুরু হতে পারে।
এখন দেখার বিষয়, মুক্তিযুদ্ধের প্রতীক বঙ্গবন্ধুকে স্বীকৃতি থেকে বাদ দেওয়ার এই সিদ্ধান্ত কতটা টিকে থাকতে পারে আদালত ও জনমতের কাঠগড়ায়।