আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করে নির্বাচনের পথে হাঁটছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। এমন প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠেছে—দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দলটিকে বাদ দিয়ে কি আদৌ ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক’ নির্বাচন সম্ভব? এই বিতর্কে নিজ অবস্থান ব্যাখ্যা করলেন ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক গোয়েন লুইস (Gwen Lewis)।
বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে কূটনৈতিক বিটের সাংবাদিকদের সংগঠন ডিক্যাব আয়োজিত এক আলোচনায় অংশ নিয়ে গোয়েন লুইস স্পষ্ট করেন, জাতিসংঘ কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলকে কেন্দ্র করে নয়, বরং সামগ্রিক জনগণের অংশগ্রহণকেই অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন হিসেবে দেখে।
আওয়ামী লীগের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে লুইস বলেন, “এই প্রশ্ন সরকারের কাছে করা উচিত। আমি আওয়ামী লীগ বা বিএনপির পক্ষে কথা বলছি না। জাতিসংঘ কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়।”
তিনি ব্যাখ্যা করেন, জাতিসংঘ ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন’ বলতে বোঝে এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে নারী, সংখ্যালঘু, ধর্মীয় গোষ্ঠী ও নৃ-গোষ্ঠীসহ সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে। তিনি বলেন, “আমরা চাই প্রতিটি বাংলাদেশির কণ্ঠস্বর থাকুক। অন্তর্ভুক্তি মানে কেবল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নয়, বরং পুরো জনগোষ্ঠীর সক্রিয় অংশগ্রহণ।”
তবে গোয়েন লুইস এটিও স্বীকার করেন যে, দেশের পরিস্থিতিও গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, “সরকার পরিস্থিতি বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটি একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত এবং সরকারের নিজস্ব সিদ্ধান্ত।”
আলোচনায় আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা দেন জাতিসংঘ প্রতিনিধি। তিনি জানান, বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নে ঢাকায় শিগগিরই জাতিসংঘ মানবাধিকার অফিস স্থাপন করা হচ্ছে। এই উদ্যোগের জন্য একটি সমঝোতা স্মারক ইতোমধ্যে চূড়ান্ত হয়েছে বলেও তিনি জানান।
জাতিসংঘের এই অবস্থান রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রে থাকলেও, লুইসের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে আন্তর্জাতিক সংস্থাটি দলীয় রাজনীতি নয়, নাগরিক অধিকারের দৃষ্টিকোণ থেকেই নির্বাচনকে মূল্যায়ন করতে চায়।