ভারত ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল করায় ‘শাপে বর’—পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন

ভারতের সঙ্গে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলের ঘটনাকে নেতিবাচক নয়, বরং বাংলাদেশের জন্য ‘শাপে বর’ হিসেবে দেখছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন (Touhid Hossain)। তাঁর মতে, এই পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আরও স্বাধীন হয়েছে এবং বিকল্প ব্যবস্থা গড়ে ওঠায় ভারতের ওপর নির্ভরতা হ্রাস পেয়েছে।

বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, “ভারতের ওপর আমাদের নির্ভরতা কমেছে। পণ্য এখন সরাসরি চট্টগ্রাম ও সিলেট বিমানবন্দর থেকে পাঠানো যাচ্ছে। তাই ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধ হওয়া আমাদের ক্ষতি নয়, বরং সুবিধা।”

তিনি বলেন, “বাংলাদেশ থেকে পণ্য সরাসরি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে, তাহলে কেন অন্য দেশের ট্রানজিট সুবিধার ওপর নির্ভর করতে হবে?” তাঁর মতে, স্বাধীন ও কার্যকর বিকল্প ব্যবস্থা তৈরি হওয়ায় দেশীয় সক্ষমতা আরও বেড়েছে।

ভারত একের পর এক সুবিধা বাতিল করছে—এ প্রসঙ্গে তৌহিদ হোসেন জানান, “আমরাও প্রয়োজন অনুযায়ী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানি বন্ধ করেছি। আমাদের জাতীয় স্বার্থেই সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়েছে। তারা যে সুবিধা বাতিল করেছে, তা তাদের প্রয়োজন থেকে এসেছে কি না, তা আমরা জানি না।”

সীমান্ত ইস্যুতে উপদেষ্টা জানান, ভারতের অব্যাহত পুশইন নীতির কারণে বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই হাজারের বেশি অবৈধ অনুপ্রবেশকারীর মুখোমুখি হয়েছে। “আমরা বারবার চিঠি দিয়েও এটি বন্ধ করতে পারিনি,” বলেন তিনি। “এখন আমরা কনস্যুলার সংলাপের মাধ্যমে বিষয়টি তুলতে চাই। একটি বিস্তারিত চিঠি প্রস্তুত করা হচ্ছে।”

সীমান্তে হত্যাকাণ্ড নিয়ে কঠোর প্রতিক্রিয়ার ঘাটতি প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে তৌহিদ হোসেন বলেন, “এগুলো কখনোই গা সওয়া নয়, নমনীয় হওয়ার সুযোগ নেই। আমরা প্রতিবাদ করে যাচ্ছি, এবং এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। সীমান্তে হত্যাকাণ্ড কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে বাংলাদেশের তরফ থেকে যে অনুরোধ জানানো হয়েছিল, তার কোনো জবাব ভারত থেকে এখনও পাওয়া যায়নি বলেও তিনি নিশ্চিত করেন।

বিদেশে বাংলাদেশিদের ভিসা প্রক্রিয়া জটিল হওয়ার প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “এতে অনেকাংশেই আমাদের দেশীয় মানুষ, বিশেষ করে যারা শ্রমিক পাঠান, তারাই দায়ী। মালয়েশিয়ার মতো বন্ধুত্বপূর্ণ দেশেও বৈধপথে কম, কিন্তু অবৈধভাবে অনেক বাংলাদেশি গেছেন। এটা তাদের দোষ নয়, আমাদের দোষ।”

তিনি বলেন, “আমাদের ঘর সামলাতে হবে। হয়তো অনেকের এই কথা ভালো লাগবে না, কিন্তু বাস্তবতা এটাই—এই জায়গায় আমাদের অনেক কিছু করার আছে।”

সেদিন ভুটানের রাষ্ট্রদূত ও শ্রীলঙ্কার হাইকমিশনারও পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে পৃথকভাবে সাক্ষাৎ করেছেন বলে মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *