কক্সবাজারের সীমান্তজুড়ে ত্রাস ছড়ানো শাহীন ডাকাত শেষমেশ ধরা পড়লেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর হাতে। বৃহস্পতিবার (৫ জুন) সকালে রামুর গর্জনিয়া এলাকায় এক চৌকস অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে সেনাবাহিনী। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রামু থানার অফিসার ইনচার্জ তৈয়বুর রহমান।
দীর্ঘদিন ধরে রামু উপজেলার সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ করতেন এই শাহীন ডাকাত। ‘গর্জনিয়ার শাহীন’ নামে পরিচিত এই অপরাধপতি নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন শতাধিক সশস্ত্র সন্ত্রাসীকে, যারা নিয়মিত মাদক ও গরু চোরাচালানে যুক্ত ছিল। সীমান্তের ওপার থেকে এনে দিতেন কোটি কোটি টাকার মাদক ও গবাদি পশু, আর বাংলাদেশ থেকে পাচার করতেন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। এই চক্রের পেছনে ছিল বিশাল ক্ষমতাধর নেটওয়ার্ক।
স্থানীয় সূত্র বলছে, সাইমুম সরওয়ার কমল (Saimum Sarwar Kamal) নামে সাবেক একজন আওয়ামী লীগ (Awami League) হুইপের ছত্রছায়ায় শাহীন রাতারাতি রূপ নেন সীমান্তের ‘মাফিয়া’তে। অস্ত্র চালনা থেকে শুরু করে নতুন সদস্য সংগ্রহ পর্যন্ত নানা কাজে তাকে সহযোগিতা করতেন সাবেক আরএসও (RSO) নেতা নসরুল্লাহ। কমলের নিরাপত্তায় গর্জনিয়ায় আত্মগোপন করেও ছিলেন এক সময় শাহীন। পরে তিনি বিদেশে পালিয়ে যান বলে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের পতনের পর শাহীন তার প্রভাব ধরে রাখতে আশ্রয় নিতে চেয়েছিলেন দেশের অন্যতম প্রধান একটি রাজনৈতিক দলে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। সম্প্রতি চোরাই গরু আটক করার সময় বিজিবির ওপর হামলার ঘটনায় পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এই ঘটনার পর ১ জুন থেকে যৌথবাহিনীর বিশেষ অভিযান শুরু হয়। অবশেষে বৃহস্পতিবার সেনাবাহিনী তাকে পাকড়াও করে।
স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, শাহীন শুধু চোরাচালান নয়—খুন, লুটপাট, বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া, এমনকি নিজ দলের লোকজনকেও হত্যা করেছেন নির্দ্বিধায়। তার বিরুদ্ধে অন্তত ২২টি মামলা রয়েছে, যার মধ্যে ৮টি সরাসরি হত্যার অভিযোগ। ফলে পুরো সীমান্ত অঞ্চলে আজও তার দখলদারিত্ব ও সহিংসতার দাগ বয়ে বেড়াচ্ছে মানুষ।
এখন প্রশ্ন উঠেছে—এত বছর ধরে রাষ্ট্রের চোখ ফাঁকি দিয়ে কিভাবে এত বড় এক অপরাধী সাম্রাজ্য চালিয়ে গেলেন শাহীন ডাকাত? এবং তার রাজনৈতিক আশ্রয়দাতা ও সহযোদ্ধারা আদৌ কি বিচারের মুখোমুখি হবেন?