ঈদে ঘরমুখো মানুষের ঢল এবং অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে ভয়াবহ যানজট দেখা দিয়েছে ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে (Dhaka-Tangail-Jamuna Bridge Highway)। বৃহস্পতিবার ভোর থেকে টাঙ্গাইলের আশেপাশের অংশে অন্তত ২২ কিলোমিটারজুড়ে থেমে থেমে যানজট দেখা গেছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন ঈদযাত্রায় বের হওয়া হাজারো মানুষ।
আশেরপুর বাইপাস থেকে শুরু হয়ে যমুনা সেতু পর্যন্ত দীর্ঘ এ যানজটের কারণে ভোর থেকে শুধুমাত্র উত্তরবঙ্গমুখী যানবাহনগুলোকে সেতু দিয়ে পার করা হচ্ছে। যদিও পুলিশ বলছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে তারা সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।
যাত্রীদের অভিযোগ, ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে বসে থেকে তারা প্রচণ্ড ক্লান্ত ও বিপর্যস্ত। এক বাসযাত্রী বলেন, “রাত থেকেই পথে আছি, খাবার পর্যন্ত জোটেনি। নারী-শিশুদের অবস্থা আরও করুণ।”
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান (Superintendent of Police, Mizanur Rahman) বলেন, অতিরিক্ত গাড়ির চাপে এবং একটি গাড়ির চাকা খুলে যাওয়ার কারণে এই দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়েছে। তবে যানজট নিরসনে পুলিশ কাজ করছে বলে জানান তিনি।
এদিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক (Dhaka-Mymensingh Highway)-এ গাজীপুর অংশে তৈরি হয়েছে ১৫ কিলোমিটারের যানজট। শিল্পাঞ্চল এলাকা থেকে অসংখ্য মানুষ পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে ছুটে যাওয়ায় মহাসড়কে তীব্র চাপ পড়েছে।
বাসচালক হাতেম আলী জানান, “গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ি থেকে ভালুকার আমতলী পর্যন্ত যানজটে আমরা আটকে ছিলাম। দিনের বেশিরভাগ সময় গাড়ি থেমে থেমে চলছে।” মাওনা এলাকার বাসিন্দা সাঈদ চৌধুরী বলেন, সাধারণত যে পথ ২০ মিনিটে পাড়ি দেন, ঈদের ভিড়ে সেখানে আড়াই ঘণ্টায়ও পুরোটা যেতে পারেননি। তার ভাষায়, “নারী ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছেন। পুলিশ আছে, কিন্তু চালকদের মধ্যে সচেতনতা নেই।”
মাওনা হাইওয়ে থানার ওসি আইয়ুব আলী (OC Ayub Ali, Maona Highway Police Station) জানান, ভালুকার সীডস্টোর এলাকায় দুপুরের পর হঠাৎ যাত্রীর চাপ বেড়ে যায়। তার ওপর বৃষ্টির কারণে অনেক গাড়ি রাস্তায় থেমে থাকায় মোড়ে মোড়ে যানজট তৈরি হয় এবং তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
এর বিপরীতে স্বস্তির চিত্র দেখা গেছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে (Dhaka-Chattogram Highway)। অতিরিক্ত যান চলাচল থাকলেও কোথাও বড় ধরনের যানজট দেখা যায়নি। কাঁচপুর, মদনপুর, মেঘনা টোলপ্লাজা পয়েন্টে বৃহস্পতিবার সকালের চিত্র ছিল তুলনামূলক স্বাভাবিক।
যাত্রীদের অভিযোগ, দূরপাল্লার বাসগুলোতে ১০০-২০০ টাকা বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। যদিও বাস কাউন্টার কর্তৃপক্ষ তা অস্বীকার করেছে। কুমিল্লাগামী এক যাত্রী আলমগীর হোসেন বলেন, “রাস্তা ফাঁকা, তাই যাচ্ছি। কিন্তু কাউন্টার থেকে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে ১০০ টাকা বেশি নিয়েছে।”
কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশের ওসি কাজী ওয়াহিদ মোর্শেদ (OC Kazi Wahid Morshed, Kanchpur Highway Police) জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজট নেই। তবে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে রাস্তার কাজের কারণে কিছুটা ধীরগতিতে যান চলছে। তিনি জানান, ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে ৬০ জন অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে এবং সেনাবাহিনীর সদস্যরাও টহল দিচ্ছেন।
সোনারগাঁ থানার ওসি মোহাম্মদ মফিজুর রহমান (OC Mohammad Mofizur Rahman, Sonargaon Police Station) জানান, মহাসড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে টহল জোরদার করা হয়েছে।