ঈদকে সামনে রেখে ঘরমুখো মানুষের ঢলে ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে (Dhaka-Tangail-Jamuna Bridge Highway) সৃষ্টি হয়েছে ৩০ কিলোমিটার জুড়ে থেমে থেমে যানজট। সড়ক দুর্ঘটনা, যানবাহন বিকল ও অতিরিক্ত চাপের কারণে উত্তরের পথে দীর্ঘ এই যানজটের ফলে ভয়াবহ দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রী ও চালকরা।
পথের কষ্ট সহ্য করতে না পেরে অনেকেই জীবন ঝুঁকি নিয়ে ট্রাক ও বাসের ছাদে চড়েই গন্তব্যের দিকে রওনা হয়েছেন। একইসঙ্গে অভিযোগ উঠেছে কয়েকগুণ বাড়তি ভাড়া আদায়ের, যা পরিবহন–সংশ্লিষ্টরাও স্বীকার করেছেন। তারা জানান, ঈদের ফেরার সময়ে খালি গাড়ি নিয়ে আসতে হয় বলেই বাড়তি ভাড়া নিতে বাধ্য হচ্ছেন।
গাজীপুর হয়ে যানজটের বিস্তার
গাজীপুরে (Gazipur) ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কজুড়ে যানবাহনের চাপ এতটাই বেড়েছে যে, বোর্ডবাজার থেকে সালনা পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার এবং কোনাবাড়ী থেকে মির্জাপুরের গোড়াই পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার এলাকায় গাড়িগুলো চলছে ধীরে ধীরে।
চন্দ্রা এলাকায় আটকে থাকা আলম এন্টারপ্রাইজের যাত্রী আকবর আলী বলেন, “যানজটের কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কষ্ট করছি। কখন যে যানজট শেষ হবে কে জানে!” একই এলাকায় আটকে পড়া জে কে পরিবহনের চালক ময়নাল হোসেন জানান, বহু যাত্রী গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।
অনেকে হেঁটে রওনা হচ্ছেন, কেউবা ট্রাক কিংবা পিকআপে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে চাচ্ছেন। এই সময়টা যেন এক যুদ্ধের নামান্তর হয়ে উঠেছে লাখো পরিবারের জন্য।
কারখানার ছুটির ঢলেই তৈরি হয় বিশৃঙ্খলা
পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গতকাল পোশাক কারখানাগুলোতে ছুটি হওয়ায় একযোগে যাত্রীদের ঢল নামে মহাসড়কে। রাতভর বিভিন্ন পয়েন্টে গাড়ি আটকে থেকে সৃষ্টি হয় ব্যাপক যানজট। আবার ফিটনেসবিহীন যানবাহন বিকল হয়ে যাতায়াতের গতি থামিয়ে দেয়।
যমুনা সেতুতে সর্বোচ্চ যানবাহন চলাচলের রেকর্ড
যমুনা সেতু (Jamuna Bridge) পারাপারে যানবাহনের চাপে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে যান চলাচল। ধারণক্ষমতা অতিক্রম করে যমুনা সেতু দিয়ে ২৪ ঘণ্টায় পার হয়েছে প্রায় ৬৫ হাজার যানবাহন, যা থেকে আদায় হয়েছে ৪ কোটি ১৯ লাখ টাকার টোল—এটাই সেতুর ইতিহাসে সর্বোচ্চ বলে জানিয়েছেন নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল ইসলাম পাভেল।
সেতুর চাপ কমাতে উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকাগামী গাড়িগুলোকে ঘুরিয়ে ভূঞাপুরের মাধ্যমে পাঠানো হচ্ছে।
দ্রুত স্বাভাবিক হওয়ার আশ্বাস প্রশাসনের
নাওজোর হাইওয়ে পুলিশের ওসি সওগাতুল আলম জানান, “রাস্তায় প্যাসেঞ্জার তোলার প্রবণতা, গাড়ি বিকল ও অতিরিক্ত চাপের কারণে এই যানজট তৈরি হয়েছে। পুলিশ সদস্যরা সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে।”
একই কথা বলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাকিবুল হাসান রাসেল। তিনি বলেন, “মহাসড়কে যানজট নিরসনে সেনাবাহিনী ও পুলিশ একযোগে কাজ করছে। প্রায় ৬ শতাধিক পুলিশ সদস্য পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করছেন।”
তবে যাত্রীদের দুর্ভোগের শেষ কোথায়, তা এখনো নিশ্চিত নয়। ২ ঘণ্টার রাস্তা পার হতে ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা লাগছে। নারী, শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠ যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন অনেকে।
এই ঈদযাত্রা যেন হয়ে উঠেছে ধৈর্যের কঠিনতম পরীক্ষা।