ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে রাজধানীতে কোরবানির পশু জবাই ও মাংস কাটার কাজ করতে দিনাজপুর থেকে ঢাকায় ছুটছেন প্রায় আড়াই হাজার পেশাদার ও মৌসুমি কসাই। কেউ যাচ্ছেন ট্রেনে, কেউ বাসে, কেউবা বিমানেও। শুধুমাত্র বৃহস্পতিবার দুপুরে পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ট্রেনে ৬৫ জন কসাইয়ের একটি দল দিনাজপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করেছেন।
দিনাজপুর কসাই সমিতি (Dinajpur Butchers Association) জানিয়েছে, শহর ও জেলার বিভিন্ন উপজেলা মিলিয়ে প্রায় আড়াই হাজার কসাই এবার ঢাকায় যাবেন। এর মধ্যে ৫০০ জনের মতো কসাই শুধুমাত্র শহর থেকেই রওনা হয়েছেন। অন্যান্য উপজেলাগুলো থেকে পেশাদার ও মৌসুমি কসাই মিলিয়ে এই সংখ্যা আরও বেড়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও পরিচিত জনদের মারফতে ঢাকাবাসীর সঙ্গে আগেই চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন এসব কসাই। কোরবানির পশুর দামের ওপর নির্ভর করে নির্ধারিত হচ্ছে জবাই ও মাংস কাটার পারিশ্রমিক। প্রতি হাজার টাকায় ২৫০ টাকা হারে নেওয়া হচ্ছে, অর্থাৎ ১০ হাজার টাকার পশুতে কসাই ফি আড়াই হাজার, লাখ টাকার পশুতে ২৫ হাজার টাকা। এছাড়াও কসাইদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাও করতে হচ্ছে পশুর মালিকদেরই।
একদিনেই লাখ টাকার আয়!
দিনাজপুরের কসাই রানা জানান, চারজনের একটি গ্রুপ দিনে পাঁচ থেকে ছয়টি পশু জবাই ও মাংস কাটতে পারে। এতে একদিনে তাদের আয় দাঁড়ায় এক লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত। ঈদের তিন দিনে তাদের আয় হতে পারে তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত। খরচ বাদ দিয়ে হাতে থাকে অন্তত ৮০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা।
কসাই আমিনুল ইসলাম বলেন, “আমরা ৬৫ জনের একটি দল বৃহস্পতিবার দুপুরে ট্রেনে করে রওনা হয়েছি। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ ৪০ হাজার টাকায় চুক্তি করেছেন, আবার কেউ কেউ এক লাখ টাকাও নিচ্ছেন।”
বিমানে করে ঢাকায় কসাই!
কেবল ট্রেন বা বাস নয়, অনেকে সময় ও যানজট এড়াতে বিমানে করেও ঢাকায় যাচ্ছেন। দিনাজপুরের বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সির মালিকরা জানিয়েছেন, শুক্রবার সৈয়দপুর বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশ বিমান, নভোএয়ার ও ইউএস বাংলার ফ্লাইটে অন্তত ১৫ থেকে ২০ জন কসাই ঢাকায় যাবেন। ভাড়া পড়ছে গড়ে ৪৮০০ টাকা।
বেঙ্গল ট্রাভেলসের মালিক তোফায়েল আহম্মেদ জুয়েল বলেন, “আজাহার আলী নামে একজন কসাই আমার কাছ থেকে শুক্রবার রাতের ফ্লাইটের টিকিট নিয়েছেন। তিনিও ফিরতি টিকিট আগেভাগেই বুকিং দিয়েছেন।”
আজাহার আলী জানান, “আমি কেবল গরুর চামড়া ছাড়ানোর কাজ করছি। ৭০ হাজার টাকার চুক্তি করেছি, আরও ১০-১৫টি গরুর কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।”
ঈদে কসাই সংকট মেটাতেই ঢাকামুখো এই স্রোত
প্রতি বছর ঈদের সময় ঢাকায় কসাই সংকট প্রকট হয়ে ওঠে। অভিজ্ঞ কসাই না পেলে সঠিকভাবে পশু জবাই ও মাংস কাটার কাজ ব্যাহত হয়। সেই সংকট মেটাতেই দিনাজপুরের এই বিশাল কসাই বাহিনী এবারও ঢাকার পথে। তাদের আগমন যেমন পূরণ করছে একটি মৌসুমি চাহিদা, তেমনি স্থানীয় পর্যায়ে তৈরি করছে হাজার হাজার টাকার আয় এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ।