এবার পবিত্র ঈদুল আজহায় রাজধানী ঢাকায় কোরবানির পশুর সংখ্যা নাটকীয়ভাবে কমে গেছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (DNCC) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (DSCC)—এই দুই নগর সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, ২০২৫ সালে মোট ৬ লাখ ৩২ হাজার ৮৩৪টি পশু কোরবানি হয়েছে। অথচ গত বছর এই সংখ্যা ছিল প্রায় ১২ লাখ। অর্থাৎ কোরবানির পশুর সংখ্যা কমেছে প্রায় অর্ধেক।
উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ জানান, এ বছর DNCC এলাকায় গরু, ছাগল, মহিষ এবং ভেড়া মিলিয়ে ৪ লাখ ৬৬ হাজার ৮০টি পশু কোরবানি হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল গরু—৩ লাখ ৫৯ হাজার ৬৭৭টি। ছাগল কোরবানি হয় ১ লাখ ৫৪৬টি, মহিষ ১ হাজার ৭৬২টি এবং ভেড়া ৪ হাজার ৫৭টি।
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া জানান, তাদের ৭৫টি ওয়ার্ডে মোট কোরবানির সংখ্যা ১ লাখ ৬৬ হাজার ৭৫৪টি। ঈদের প্রথম দিন শনিবার (৭ জুন) কোরবানি হয় ১ লাখ ৩৩ হাজার ৩১৭টি, দ্বিতীয় দিন রোববার (৮ জুন) ৩১ হাজার ৭৪৫টি এবং তৃতীয় দিন সোমবার (৯ জুন) ১ হাজার ৬৯২টি।
শুধু কোরবানির সংখ্যা নয়, এবার বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। DNCC প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, পশুর সংখ্যা কমলেও বর্জ্য উৎপাদন বেড়েছে। সোমবার দুপুর ২টা পর্যন্ত ২০ হাজার ৮৮৯ টন বর্জ্য সংগ্রহ করে ল্যান্ডফিলে ফেলা হয়েছে। তিনি জানান, ধারণা করা হয়েছিল ২০ হাজার টনের মতো বর্জ্য হবে, কিন্তু তার চেয়ে বেশি সংগ্রহ করতে হয়েছে।
এজাজ বলেন, “আমরা ভেবেছিলাম সোমবারই বর্জ্য অপসারণ শেষ ঘোষণা করব। কিন্তু নাগরিকদের সঙ্গে কথা বলে বুঝেছি, অনেকে দেরিতে বর্জ্য ফেলে। তাই পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চলমান থাকবে।”
DSCC প্রশাসক জানান, তাদের লক্ষ্য ছিল ৩০ হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য অপসারণ, কিন্তু বাস্তবে ৩১ হাজার ২২৬ মেট্রিক টন বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। এর জন্য ১২ হাজার ৮৫৩ জন শ্রমিক, ২ হাজার ৭৯টি যানবাহন ও ৩৪৪টি যান্ত্রিক সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়।
এছাড়া দক্ষিণের ৮টি অস্থায়ী পশুর হাটের বাঁশের খুঁটি ও উড়ন্ত বর্জ্য সরানো হয়েছে বলে জানান শাহজাহান মিয়া। তিনি আরও বলেন, নগর ভবনে স্থাপিত কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের মাধ্যমে সরাসরি হাট ও বর্জ্য অপসারণ তদারকি করা হয়। প্রতিটি হাটে আলাদা নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি কমিটি গঠন করা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মোতায়েন করা হয় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে মোবাইল কোর্ট এবং আনসার ভিডিপির ৪০০ সদস্য।
সব মিলিয়ে পশু কোরবানির সংখ্যা কমলেও নগরের পরিচ্ছন্নতা ও প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনায় কর্তৃপক্ষ রেখেছে বাড়তি সতর্কতা ও প্রস্তুতি।
