‘প্রচারের আড়ালে প্রকৃত সত্য’: গভর্নর মনসুরের মেয়ের ফ্ল্যাট প্রসঙ্গে জয়ের অভিযোগে প্রতিক্রিয়া

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর (Ahsan H. Mansur)–কে ঘিরে সম্প্রতি শুরু হওয়া আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এবং পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় (Sajeeb Wazed Joy) ফেসবুকে এক পোস্টে দাবি করেন, গভর্নর মনসুর দুবাইয়ে তার কন্যা মেহরিন সারা মনসুরের নামে ৪৫ কোটি টাকার একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কিনে দিয়েছেন। পোস্টে একটি দলিলের ছবি যুক্ত করে সেই অভিযোগের প্রমাণও দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।

তবে গভর্নর মনসুর বিষয়টি সরাসরি নাকচ করেছেন। গণমাধ্যমকে দেওয়া তার বক্তব্যে তিনি স্পষ্ট করে জানান, উক্ত সম্পত্তি তার মেয়ে মেহরিন সারা মনসুরের ব্যক্তিগত মালিকানা এবং তিনি গভর্নর হওয়ার আগেই, ২০২৩ সালে ফ্ল্যাটটি কেনা হয়। তিনি বলেন, “আমার নাম সেখানে শুধুই পিতার পরিচয়ে এসেছে, যেটা স্বাভাবিক নিয়ম।”

তিনি আরও জানান, মেহরিন বিবাহিত, প্রায় ৪০ বছর বয়সী, এবং পরিবারের সঙ্গে দুবাইয়ে বাস করেন। নিজস্ব ব্যবসার কারণেই সে দুবাইয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করছে। এমন অবস্থায় একটি ফ্ল্যাট কেনা তার জন্য সম্পূর্ণ যৌক্তিক ও স্বাভাবিক, বলেন মনসুর। “এর সঙ্গে আমার কোনো আর্থিক সংশ্লিষ্টতা নেই,” যোগ করেন তিনি।

গভর্নর মনসুর অভিযোগ করেন, “দুঃখজনকভাবে জয় এমন একটি বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন যা প্রকৃতপক্ষে আমার সঙ্গে সম্পর্কহীন। এটি ব্যক্তিগত প্রচার ও রাজনৈতিক বিতর্ক তৈরির কৌশল হতে পারে, যেখানে প্রকৃত লক্ষ্য হচ্ছে নিজেদের দুর্নীতিগুলো থেকে দৃষ্টি সরানো।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ বলছেন, এটি কেবল একটি সম্পত্তি নিয়ে বিতর্ক নয়; বরং এটি একটি স্পষ্ট প্রচার কৌশল, যার মাধ্যমে সজীব ওয়াজেদ জয় হয়তো সরকার বা সংশ্লিষ্ট মহলের বিরুদ্ধে উঠা আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ থেকে মনোযোগ সরাতে চাইছেন।

অনেকে বলছেন, গভর্নর মনসুর একজন স্বচ্ছ ভাবমূর্তির অর্থনীতিবিদ হিসেবে বহু বছর ধরে আন্তর্জাতিক এবং দেশীয় অঙ্গনে কাজ করে এসেছেন। তার বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো দুর্নীতির অভিযোগ অতীতে কখনো আসেনি। ফলে এই অভিযোগের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে জনমনে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে।

সব মিলিয়ে, সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া এই ঘটনা এখন বহুমাত্রিক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। একদিকে ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও সম্মান রক্ষার প্রশ্ন, অন্যদিকে রাজনৈতিক স্বার্থে বিভ্রান্তিকর প্রচারণার অভিযোগ—এই দুই মেরুতে বিভক্ত হয়ে পড়েছে জনমত।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *