“তুমি আমাকে টাকা দাও, আমি তোমাকে ভোট দিই” : ভোটার নিয়ে ড.ইউনূসের বিস্ফোরক মন্তব্য

ভোট মানেই ‘টাকা দাও, ভোট নাও’—এই মন্তব্যে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Muhammad Yunus)। গতকাল বুধবার লন্ডনের চ্যাথাম হাউজে আয়োজিত এক আলোচনায় তিনি ভোটারদের সচেতনতা, গণতন্ত্রের বাস্তবতা এবং নির্বাচন নিয়ে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন। তবে তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে এমন এক হতাশাব্যঞ্জক চিত্র, যা ভোটার ও রাজনীতিবিদদের মধ্যে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।

চ্যাথাম হাউজের পরিচালক ও আলোচনার সঞ্চালক ব্রনউইন ম্যাডেক্স প্রশ্ন করেন, “আপনার কেন ভোটারদের ওপর আস্থা নেই? অনেকেই বলবেন আপনি গণতন্ত্রকে অবমূল্যায়ন করছেন।” এ প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, “তুমি আমাকে কিছু টাকা দাও, আমি তোমাকে ভোট দেব—এটাই তো বাস্তবতা। সব ভোটকেই এমন বলা যায়।” তাঁর ভাষায়, অনেক ভোটার রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার জটিলতা বুঝতে আগ্রহী নয়। বরং তারা ভোটকে সহজ এক লেনদেন হিসেবে দেখে।

ড. ইউনূস ব্যাখ্যা দেন, “যদি সবাই বুঝতে পারত যে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ কী, সংখ্যানুপাতিক ভোটাধিকার কী, তাহলে কথা ছিল। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, মানুষ সরলীকরণ চায়। ফলে ভোট হয়ে দাঁড়ায় এক ধরনের বাণিজ্য: ‘তুমি আমাকে কত দেবে, আমি তোমাকে ভোট দেব’।”

তিনি বলেন, এই বাস্তবতা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য তাঁর সরকার এমন এক প্রক্রিয়া চালু করতে চায়, যেখানে বিতর্ক থাকবে, আলোচনার মাধ্যমে মতৈক্যে পৌঁছাতে হবে। “আমরা চাই না ভোটারদের প্রতিপক্ষ বানাতে। বরং তারা যেন বিতর্ক দেখে, বোঝে এবং সিদ্ধান্ত নেয়। এ কারণেই আমরা ‘জুলাই সনদ’ প্রস্তুত করছি।”

প্রধান উপদেষ্টা আরও জানান, এই ‘জুলাই সনদ’ হবে একটি লিখিত দলিল, যেখানে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সম্মতির ভিত্তিতে সুপারিশগুলো থাকবে। সব দলের স্বাক্ষর সংযুক্ত করে তা জাতির সামনে উপস্থাপন করা হবে আগামী জুলাই মাসেই।

ড. ইউনূস বলেন, “আমাদের তিনটি মূল দায়িত্ব—সংস্কার, অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা এবং নির্বাচন আয়োজন। এই লক্ষ্যেই আমরা এগোচ্ছি।”

প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ (Awami League) সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়। এরপর ৮ আগস্ট অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই নির্বাচন আয়োজনের দাবিতে রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

এ পরিস্থিতিতে গত ৬ জুন ড. ইউনূস ঘোষণা দেন, আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথম ভাগেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে যুক্তরাজ্য সফরে গিয়ে তাঁর ‘ভোটারদের ক্রয়যোগ্যতা’ সংক্রান্ত মন্তব্য রাজনৈতিক ও নাগরিক মহলে নতুন করে আলোড়ন তুলতে পারে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *