কুমিল্লার মুরাদনগরের পাহাড়পুর ইউনিয়নের পান্তি বাজারে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ যানজটে আটকে পড়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এক লাইনম্যানকে বেধড়ক মারধর করার অভিযোগ উঠেছে এনসিপি (NCP) নেতাদের বিরুদ্ধে। এই হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন বাজারের দায়িত্বপ্রাপ্ত লাইনম্যান মহিউদ্দিন।
৯ জুন সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া যানজটে আটকে পড়েন পান্তি বাজার এলাকায়। এ সময় বাজারের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত ছিলেন ৩৯ বছর বয়সী মহিউদ্দিন, যিনি পাহাড়পুর গ্রামের বাসিন্দা এবং বাজার কমিটির নিযুক্ত লাইনম্যান।
মহিউদ্দিন জানান, উপদেষ্টার আগমনের খবর দিয়ে আগে থেকেই সতর্ক করা হয় তাকে। পাহাড়পুর আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে এবং স্থানীয় এনসিপি নেতা মো. সালমান সরকার, মো. হাসান ও লক্ষীপুরের হোসেন মিয়ার ছেলে হাবিবসহ কয়েকজন এসে বলেন—“উপদেষ্টা আসছেন, বাজার একদম ক্লিয়ার রাখতে হবে, একটাও গাড়ি যেন না থাকে।”
তিনি তাদের জানান, যানজট বেশি থাকায় একা পুরো রাস্তা পরিষ্কার রাখা তার পক্ষে কঠিন হবে এবং অনুরোধ করেন কয়েকজন সহকারী দিতে। কিন্তু এনসিপি নেতারা তাতে রাজি না হয়ে হুমকি দিয়ে বলেন, “তুই রাস্তা ক্লিয়ার রাখবি, না হলে তোর খবর আছে।”
পরে দুপুরে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ যখন বাজারে পৌঁছান, তখন সরকারি গাড়িসহ যানজট আরও বেড়ে যায়। লাইনম্যান মহিউদ্দিন চেষ্টা করেন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে, কিন্তু একা পেরে উঠছিলেন না। সে সময় তিনি পুনরায় সহযোগিতা চাইলে এনসিপি নেতারা তাকে হুমকি দিয়ে বলে, “তোকে দেইখা লইমু।”
বিকেল ৩টার দিকে মহিউদ্দিন যখন তার পরিচিত কয়েকজনকে সিএনজি ঠিক করে দিচ্ছিলেন, তখন অতর্কিতে আবারও হামলা চালানো হয় তার ওপর। অভিযোগ অনুযায়ী এনসিপি নেতা সালমান, সাগর, ইয়াছিন, হাবিব, রাকিব, তানভীর, মনিরুজ্জামান, নজরুল, সাকিব, আলামিন, জাহিদ, হাসান, ডালিম ও ইসমাইল মিলে তাকে ঘিরে এলোপাতাড়ি কিল, ঘুষি ও লাথি মেরে গুরুতর আহত করে। প্রাণে বাঁচতে তিনি পাশের একটি মিষ্টির দোকানে আশ্রয় নেন।
হামলায় তার চোখে এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে গুরুতর আঘাত লাগে। এ ঘটনায় অসহায় মহিউদ্দিন প্রধান উপদেষ্টার কাছে বিচার চেয়ে বলেন, “আগে আওয়ামী লীগের নেতারা যানজটে পড়লে ট্রাফিক বা লাইনম্যানকে মারত। এখন উপদেষ্টা আসিফ যানজটে পড়ায় আমাকেও মারধর করা হল। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।”
এই ঘটনার পর স্থানীয়ভাবে ব্যাপক চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। এনসিপির পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি এখনো পর্যন্ত।