সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিনিয়োগের নিম্নগতি এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সংকোচনের প্রেক্ষাপটে আসন্ন বাজেট অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এমন পরিস্থিতিতে বাজেটে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এবং বিনিয়োগকে প্রণোদনা দেওয়া উচিত ছিল, যা অনুপস্থিত থাকায় বাস্তব সংকট আরও জটিল হতে পারে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (BBS) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে দেশে বেকার মানুষের সংখ্যা ২৬ লাখ ৬০ হাজার। একইসঙ্গে, বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুর্বল শ্রমবাজার ও মূল্যস্ফীতির কারণে এ বছর আরও ৩০ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যেতে পারে, এবং দারিদ্র্যের হার বেড়ে ২২.৯ শতাংশে পৌঁছাতে পারে।
সিপিডি (CPD)-এর ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “বর্তমানে মজুরি বৃদ্ধির হার মূল্যস্ফীতিকে ছাড়িয়ে যেতে পারেনি। যদি আমরা বিনিয়োগ বাড়াতে পারি, কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সফল হই, তাহলে মূল্যস্ফীতি ধীরে ধীরে কমবে। এর ফলে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে।”
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (NBR) লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা। অথচ চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে আয় হয়েছে মাত্র ৩ লাখ ২১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এই বিশাল ঘাটতি পূরণে আমদানি শুল্ক ও ভ্যাট বাড়ানোর যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে ব্যবসায়ী মহলে উদ্বেগ বাড়ছে।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স-এর সভাপতি তাসকিন আহমেদ বলেন, “অর্থনীতিকে সচল করার জন্য এই বাজেট কোনো সাপোর্ট দেয়নি। এটি স্পষ্টভাবে বিনিয়োগ-বান্ধব নয়।”
বিনিয়োগে আরও হতাশার চিত্র তুলে ধরেন ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (FICCI)-এর সভাপতি জাভেদ আখতার। তিনি বলেন, “বাংলাদেশে এফডিআই এখনো জিডিপির মাত্র ০.৬ শতাংশ, যা পাকিস্তানের চেয়েও কম। অথচ পাকিস্তানের অর্থনৈতিক অস্থিরতা আমাদের চেয়ে বেশি। এর মানে হলো, আমাদের গঠনগতভাবে (structurally) অনেক ঘাটতি আছে।”
২০২৪ সালে বাংলাদেশে মোট এফডিআই এসেছে ১২৭ কোটি ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ১৩.২৫ শতাংশ কম। পাশাপাশি বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধিও টানা ছয় মাস ধরে ৮ শতাংশের নিচে, যা বিনিয়োগ স্থবিরতার স্পষ্ট ইঙ্গিত বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
কর পরিকাঠামো সংস্কার, নতুন উদ্যোক্তা তৈরি, আস্থা ফিরিয়ে আনার মতো বহু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বাজেটে কার্যকর দিকনির্দেশনার অভাব থাকায় অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার দীর্ঘায়িত হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন তারা।