জাতীয় নাগরিক পার্টি (National Citizens’ Party)–এর যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার আবারো বিতর্কের কেন্দ্রে। সাংবাদিক জাওয়াদ নির্ঝর সোমবার সকালে নিজের ফেসবুক পেজে একটি অডিও ক্লিপ প্রকাশ করেছেন, যেখানে এক নারী দলের নেত্রীর সঙ্গে সারোয়ার তুষারের কথিত কথোপকথন উঠে এসেছে। নির্ঝরের দাবি অনুযায়ী, মূল অডিওটির দৈর্ঘ্য ৪৭ মিনিট হলেও তিনি তার ফেসবুকে ৩ মিনিট ৫০ সেকেন্ডের একটি সংক্ষিপ্তাংশ প্রকাশ করেছেন, যেখানে নারী নেত্রীকে কুপ্রস্তাব ও গভীর রাতে ছবি চাওয়ার অভিযোগ উঠে।
সাংবাদিক নির্ঝর পোস্টে লিখেছেন, “জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার তার দলের নারী কর্মীকে কুপ্রস্তাব দিচ্ছে! গভীর রাতে মেয়েদের ছবি চায়! ৪৭ মিনিটের কথোপকথনের চুম্বক অংশ দেওয়া হলো।”
এ ঘটনার পরপরই আরেকটি পোস্টে সারোয়ার তুষারকে দল থেকে বহিষ্কারের দাবি তোলেন নির্ঝর। তিনি লেখেন, “জাতীয় নাগরিক পার্টি আদৌ নারীদের জন্য নিরাপদ কি না, সে বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়া উচিত। আগে থেকেই পরিচিত যৌন নিপীড়ক সারোয়ার তুষার কেন ছাত্রদের দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা হলেন?”
ফাঁস হওয়া অডিওতে শোনা যায়, একজন পুরুষ—যার কণ্ঠ সারোয়ার তুষারের সঙ্গে মিলে যায় বলে দাবি করা হচ্ছে—এক তরুণীর সঙ্গে কথোপকথনে লিপ্ত। তিনি ঐ তরুণীর কাছ থেকে ছবি চান এবং এক পর্যায়ে তার কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন। নারীর প্রতিক্রিয়ায় বোঝা যায়, তিনি এই আচরণে বিস্মিত হন। কথাবার্তার প্রসঙ্গে উঠে আসে যে, এটি গত রমজানে ইফতারের পর কোনো এক সময়ের ঘটনা, যেখানে সাক্ষাৎ চাওয়া হয়।
তবে এই কল রেকর্ডের দুই ব্যক্তির পরিচয় এখনো স্বাধীনভাবে যাচাই করা যায়নি। এদিকে অডিও ফাঁস হবার পর, সেই নেত্রীকে ফোন করেন তুষার, এবং পরবর্তীতে সেই অডিও ফাঁস হয়ে যায় গনমাধ্যমে, যা থেকে স্পষ্ট হয়ে যায়, মূল অডিওটি তুষারেরই।
এই ঘটনা নতুন নয়। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে সারোয়ার তুষার যখন রাষ্ট্রচিন্তার অন্যতম সংগঠক ছিলেন, তখনও তার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ ওঠে। অভিযোগকারীর নাম ছিল বীথি সপ্তর্ষি। এরপর রাষ্ট্রচিন্তা একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মির্জা তাসলিমা, সদস্য ছিলেন আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সামিনা লুৎফা, আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া (পরবর্তীতে তার স্থানে আইনজীবী সাদিয়া আরমান) এবং গবেষক দিলশানা পারুল।
এই কমিটি একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দেয়। তবে তদন্তের পরও অভিযোগগুলোর গ্রহণযোগ্য নিষ্পত্তি হয়নি বলে গত ৬ মে মানবাধিকারকর্মী ও তদন্ত কমিটির সদস্য ড. শহিদুল আলম জানিয়েছেন। ওই দিন তিনি নিজের ফেসবুকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বিষয়টি তুলে ধরেন।
সারোয়ার তুষারের বিরুদ্ধে একই ধরনের একাধিক অভিযোগ সামনে আসায় সামাজিক মাধ্যমে ক্ষোভ বাড়ছে। এখন দেখার বিষয়, এনসিপি কী সিদ্ধান্ত নেয় এবং নারীদের নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতা নিয়ে তারা কেমন বার্তা দেয়।