ক্ষুব্ধ নতুন ভোটারদের হাতে বাংলাদেশ: ২০২৬-এর নির্বাচনে পাল্টে যেতে পারে রাজনীতির সমীকরণ

২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ এক অনন্য রাজনৈতিক বাস্তবতার মুখোমুখি হতে চলেছে। ওই সময় যাদের বয়স ৩৫ হবে — অর্থাৎ যারা ১৯৯১ সালের জানুয়ারির পর জন্মগ্রহণ করেছেন — তারা দেশের ইতিহাসে কখনোই কোনো বিশ্বাসযোগ্য জাতীয় নির্বাচনে ভোট দেননি। সংখ্যায় এই জনগোষ্ঠী কম নয়; বরং বলা চলে, এটাই হতে যাচ্ছে দেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী ভোটার গোষ্ঠী।

গাণিতিক অনুমান বলছে, তখন দেশের সম্ভাব্য জনসংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ১৭৮-১৮০ মিলিয়নে। এর মধ্যে ৩৫ বছর বা তার নিচের বয়সী তরুণদের সংখ্যা হবে ২৯ থেকে ৩১ শতাংশ — যা সংখ্যায় প্রায় ৫৫ মিলিয়ন বা ৫.৫ কোটি। এই গোষ্ঠী ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে সম্ভাব্য ১২২ থেকে ১২৬ মিলিয়ন বৈধ ভোটারের অন্তত ৪৫ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব করবে। অর্থাৎ, মোট ভোটারের প্রায় অর্ধেক হবে এমন মানুষ, যারা জীবনে কখনো সত্যিকার অর্থে গ্রহণযোগ্য কোনো জাতীয় নির্বাচনে ভোট দেননি।

এই বিশাল অংশের ভোটাররা একটি “নতুন ভোটার শ্রেণি” হিসেবে উঠে এসেছে — যারা রাজনৈতিকভাবে অনিশ্চিত, ধোঁয়াশাপূর্ণ এবং গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা থেকে বঞ্চিত এক সময়ের উত্তরসূরি। তাদের ভোটদানের প্রবণতা, রাজনৈতিক আনুগত্য কিংবা আদর্শগত অগ্রাধিকার সম্পর্কে এখনো কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য নেই। তারা কতটা ভোট দিতে আসবে, কিংবা আদৌ ভোটাধিকার প্রয়োগে আগ্রহী হবে কিনা — সেটিও এক রহস্য।

কিন্তু সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো, এই ‘ব্ল্যাক বক্স’ ভোটারদের মধ্যেই লুকিয়ে থাকতে পারে বাংলাদেশের রাজনীতির ভবিষ্যৎ চেহারা। দীর্ঘদিন ধরে প্রত্যাশা, ক্ষোভ ও বঞ্চনার চাপে থাকা এই তরুণ গোষ্ঠী প্রচলিত নির্বাচনী হিসাব-নিকাশ উল্টে দিতে পারে সহজেই। তারা হতাশ, তারা ক্ষুব্ধ — কিন্তু একইসাথে তারা আশাও বয়ে নিয়ে চলেছে।

দেশের রাজনৈতিক দলগুলো যদি এই নতুন তরুণ ভোটারদের মন বুঝতে ব্যর্থ হয়, তবে ২০২৬ সালের জাতীয় নির্বাচন কেবলমাত্র নেতৃত্ব বদলের নয় — বরং রাজনৈতিক চেতনার আমূল রূপান্তরের সূচক হয়ে উঠতে পারে। কেননা, দেশের প্রায় অর্ধেক ভোটারই তখন হবে এমন এক প্রজন্ম, যারা কখনোই বিশ্বাসযোগ্য কোনো নির্বাচনের স্বাদ পায়নি।

২০২৬ সালের নির্বাচন হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের জন্য একটি গণতান্ত্রিক মোড় পরিবর্তনের পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় পাস করার চাবিকাঠি রয়েছে সেই ৫.৫ কোটি তরুণের হাতে — যারা সিদ্ধান্ত নেবে তারা ভোট দিবে কিনা, কার পক্ষে দিবে, এবং আদৌ তারা আগামীর বাংলাদেশকে কেমন দেখতে চায়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *