সরকারের সঙ্গে সংঘাতে না গিয়ে ইশরাক ইস্যুতে নমনীয় পথে বিএনপি

লন্ডনে দলটির প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Dr. Muhammad Yunus) ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান (Tarique Rahman)-এর মধ্যে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের পর সরকারের সঙ্গে সরাসরি কোনো দ্বন্দ্বে না যাওয়ার কৌশল গ্রহণ করেছে বিএনপি। বিশেষ করে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেনের মেয়র হিসেবে শপথ গ্রহণ না করা নিয়ে দলের অভ্যন্তরে চলমান ক্ষোভ থাকলেও—এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে সরকারবিরোধী অবস্থান থেকে কিছুটা পিছু হটছে দলটি।

গত সোমবার গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই কৌশলগত নমনীয়তার সিদ্ধান্ত আসে। বৈঠকে বেশিরভাগ সদস্য মত দেন, ইশরাক হোসেন নিজেকে মেয়র ঘোষণা করে যে আন্দোলনে নামছেন তা বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় সরকারের সঙ্গে নতুন করে সংঘাত তৈরির ঝুঁকি বহন করছে। সেই কারণে চলমান আন্দোলন থেকে ধীরে সরে আসার পরামর্শ দেওয়া হয়।

স্থায়ী কমিটির অন্তত দুইজন সদস্য জানান, মেয়র পদে গেজেট প্রকাশ ও আদালতের নির্দেশনা থাকার পরও ইশরাককে শপথ গ্রহণ করতে না দেওয়াকে ষড়যন্ত্র বলেই দেখছেন অনেকে। তবে এর জেরে সরাসরি আন্দোলনে নামা দলের জন্য এখন কৌশলগত ভুল হতে পারে বলে মনে করছেন কমিটির সদস্যরা।

বৈঠকে আলোচনায় অংশ নেওয়া এক সদস্য বলেন, “ইশরাক ইস্যুতে পক্ষ-বিপক্ষ উভয় মত এসেছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।” তিনি এ-ও জানান, পরদিন মঙ্গলবার (১৭ জুন) ইশরাক হোসেন নগর ভবনে গিয়ে করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে বৈঠক করে যে বার্তা দিয়েছেন, তা স্থায়ী কমিটিকে বিস্মিত করেছে।

স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান (Selima Rahman) মঙ্গলবার বিকেলে সাংবাদিকদের বলেন, “ইশরাক ইস্যুসহ বিভিন্ন বিষয়ে স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা হয়েছে। তবে সিদ্ধান্তের বিষয়ে দলের পক্ষ থেকেই জানানো হবে।”

অন্যদিকে, লন্ডনে ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের একান্ত বৈঠক নিয়েও সভায় আলোচনা হয়, যদিও আলোচনাটি গভীরে যায়নি। বৈঠকের শুরুতেই, তারেক রহমানের কৌশলী ভূমিকা এবং ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক ফলপ্রসূ হওয়ায় তাকে অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানায় স্থায়ী কমিটি। তবে ইউনূস-তারেক বৈঠকের নির্দিষ্ট আলোচ্য বিষয়টি কী ছিল, তা জানাতে কেউ উদ্যোগ নেননি।

স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, “আমরা শুধু তাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছি। বৈঠকের পর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আমাদের কিছু জানাননি। আমরা বিষয়টি জানতে চাইনি, কারণ এটি আমাদের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে না।”

বিষয়টি নিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এজেড এম জাহিদ হোসেন (Dr. AZM Zahid Hossain) মঙ্গলবার জানান, “স্থায়ী কমিটির আলোচনার বিষয়ে যেটুকু জানানোর দরকার, তা দলের মহাসচিব সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানাবেন। আমি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করব না।”

সবমিলিয়ে, নির্বাচনমুখী কৌশল বজায় রেখে সরকারবিরোধী সংঘাতে না গিয়ে নমনীয়তা বজায় রাখার কৌশল নিচ্ছে বিএনপি। যদিও ইশরাক হোসেনের ইস্যুতে ভেতরে বিতর্ক রয়ে গেছে, তবু নির্বাচনী সমঝোতার স্বার্থে আপাতত ধৈর্য ধরার পথেই এগোচ্ছে দলটি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *