সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় জামায়াতে ইসলামীর (Jamaat-e-Islami) এক কর্মীসভায় দেখা গেছে সাবেক ছাত্রলীগ (Bangladesh Chhatra League) নেতা জাকারিয়া হোসেনকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবিটি ভাইরাল হওয়ার পর থেকেই শুরু হয়েছে বিতর্ক আর রাজনৈতিক চাপানউতোর।
ঘটনাটি ঘটে ১২ জুন, উল্লাপাড়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বজ্রাপুর বাজারে অনুষ্ঠিত এক কর্মীসভায়। সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী মাওলানা রফিকুল ইসলাম খাঁন। আর অতিথিদের কাতারে দেখা যায় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা জাকারিয়া হোসেনকে—যার পরিচয় স্থানীয় রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ (Awami League) ঘরানার একজন সক্রিয় কর্মী হিসেবে।
ভাইরাল ছবিতে দেখা যায়, কর্মীসভায় অতিথিদের পাশে বসে রয়েছেন জাকারিয়া। জানা গেছে, তিনি ২০২০ সালে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সারোয়ার হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক আল-মাহমুদ সরকারের অনুমোদিত কমিটিতে সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পান। তৎকালীন সময়ে তিনি উল্লাপাড়া থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্য তানভীর ইমাম (Tanvir Imam)-এর ঘনিষ্ঠ বলেও পরিচিত ছিলেন।
তবে অভিযোগ উঠেছে, গত ৫ আগস্ট সরকারের পতনের গুজব ছড়ানোর সময় থেকে তিনি জামায়াত ঘরানার রাজনীতিতে ঝুঁকছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাকারিয়া হোসেন বলেন, “আমার বাবা ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের রোকন এবং পল্টন থানার কর্মপরিষদের সদস্য। ঈদের সময় বাড়ি এলে বাবা আমাকে ওই কর্মীসভায় নিয়ে যান। আমি ছাত্রলীগে ছিলাম ঠিক, তবে বর্তমানে কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নই। শিবিরেও কখনো যোগ দেইনি।”
অন্যদিকে, উপজেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক শাহজাহান আলি বলেন, “হ্যাঁ, জাকারিয়া উপস্থিত ছিলেন। তবে তিনি জামায়াতে যোগ দিয়েছেন কি না, সেটা আমার জানা নেই।”
এই ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন (Anti-Discrimination Student Movement)-এর সিরাজগঞ্জ জেলা সদস্য সচিব মেহেদী হাসান। তিনি বলেন, “একজন সাবেক ছাত্রলীগ নেতার জামায়াতের মঞ্চে উপস্থিতি রাজনৈতিক আদর্শ ও নৈতিকতার চরম বিপর্যয়। আমরা এই আচরণের তীব্র প্রতিবাদ জানাই।”
ছবির মাধ্যমে একটি অনুপস্থিত বাস্তবতা উঠে এসেছে—যেখানে রাজনৈতিক পরিচয় ও বিশ্বাসের সীমা আজ এতটাই তরল যে একদা এক মঞ্চে ছিল যাদের সংঘর্ষ, তারা আজ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বসছে। আর সেটাই যেন প্রশ্ন তুলছে—রাজনীতি কি আজ আর আদর্শে গড়া থাকে, নাকি সুবিধার ভেতরেই তার ঠিকানা খোঁজে?