শনিবার সন্ধ্যায় ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) ট্রুথ সোশ্যালে এক বিস্ফোরক দাবি করে জানান, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। হামলার লক্ষ্য ছিল ফোরদো, ইসফাহান এবং নাতানজ—তিনটি স্থাপনাই ইরানের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত এবং পশ্চিমা দুনিয়ার নজরদারিতে বহুদিন ধরেই ছিল। ট্রাম্পের এই ঘোষণায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে, যদিও ইরান কিংবা মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ তাৎক্ষণিকভাবে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
নাতানজ: ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের প্রধান ঘাঁটি
রাজধানী তেহরান থেকে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত নাতানজ (Natanz) ইরানের বৃহত্তম ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। বিশ্লেষকদের মতে, এটি সেন্ট্রিফিউজ তৈরি এবং একত্রিত করার মাধ্যমে ইউরেনিয়ামকে পারমাণবিক জ্বালানিতে রূপান্তর করার প্রধান কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অলাভজনক নিউক্লিয়ার থ্রেট ইনিশিয়েটিভ (NTI) জানিয়েছে, এখানে ছয়টি মাটির উপরের ভবন এবং তিনটি ভূগর্ভস্থ কাঠামো রয়েছে, যার মধ্যে দুটিতে ৫০,০০০ সেন্ট্রিফিউজ স্থাপনের সক্ষমতা রয়েছে।
ফোরদো: রহস্যে ঘেরা পাহাড়ের নিচের প্ল্যান্ট
ইরানের পবিত্র শহর কোমের কাছাকাছি অবস্থিত ফোরদো (Fordow) স্থাপনাটি একটি গভীর পাহাড়ের নিচে নির্মিত, যার প্রকৃত আকার এবং ক্ষমতা এখনও অনেকটাই রহস্যাবৃত। এখানকার অনেক তথ্যই এসেছে বহু বছর আগে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা কর্তৃক হাতিয়ে নেওয়া ইরানি নথিপত্র থেকে। মূল স্থাপনাগুলো আনুমানিক ৮০ থেকে ৯০ মিটার মাটির নিচে অবস্থিত, যা এটিকে আকাশপথ থেকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে চরম জটিলতা তৈরি করে।
ইসরায়েলি বিশ্লেষক এবং পূর্ববর্তী আন্তর্জাতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, শুধু যুক্তরাষ্ট্র (United States) এরই রয়েছে এত গভীরে আঘাত হানার সক্ষমতা সম্পন্ন বোমা।
ইসফাহান: ইরানের পারমাণবিক গবেষণার প্রাণকেন্দ্র
মধ্য ইরানের ইসফাহান শহরে অবস্থিত এই পারমাণবিক গবেষণা কমপ্লেক্সটিকে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির মস্তিষ্ক বলেই ধরা হয়। এনটিআই-এর তথ্য অনুযায়ী, চীনের সহায়তায় নির্মিত এই স্থাপনাটি ১৯৮৪ সাল থেকে সক্রিয়। এখানে প্রায় ৩,০০০ বিজ্ঞানী কাজ করেন, এবং এই কেন্দ্রেই পরিচালিত হয় চীনা সরবরাহকৃত তিনটি ছোট গবেষণা চুল্লি, একটি রূপান্তর সুবিধা, জ্বালানি উৎপাদন কেন্দ্র, জিরকোনিয়াম ক্ল্যাডিং প্ল্যান্টসহ অন্যান্য পরীক্ষাগার।
এই কমপ্লেক্সের পরিকাঠামো এবং সক্ষমতা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ভবিষ্যৎ নির্ধারণে অন্যতম মুখ্য ভূমিকা রাখে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ট্রাম্পের ঘোষণার তাৎপর্য
ট্রাম্পের এ ঘোষণার পেছনে রাজনৈতিক কৌশল, নির্বাচনী বার্তা নাকি বাস্তব সামরিক পদক্ষেপ—তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে এত গুরুত্বপূর্ণ তিনটি স্থাপনায় মার্কিন হামলার দাবি সামনে আসায় মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা এবং পারমাণবিক উত্তরণ নিয়ে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ বেড়েছে।