অবশেষে কাতার ও ইরাকে মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা চরমে

দোহা ও বাগদাদ থেকে এএফপি’র খবরে জানা গেছে, ইরান সোমবার কাতার ও ইরাকে অবস্থিত মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এর মাধ্যমে আমেরিকার পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর চালানো বোমা হামলার পাল্টা জবাব দিলো তেহরান, যা মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে দিয়েছে।

কাতারের রাজধানী দোহায় স্থানীয় বাসিন্দারা রাতের আকাশে ক্ষেপণাস্ত্রের আওয়াজ ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থেকে উৎক্ষেপিত ইন্টারসেপ্টর দেখতে পান। এক পর্যায়ে আকাশেই একটি ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস হতে দেখা যায়।

ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে ঘোষণা করা হয়, তারা কাতারের আল-উদেইদ (Al Udeid Air Base) ঘাঁটিতে অবস্থানরত মার্কিন বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়েছে। প্রচারিত ফুটেজে জাতীয় সংগীতের তালে তালে স্ক্রিনে লেখা ভেসে ওঠে—“আমেরিকার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে শক্তিশালী ও সফল প্রতিক্রিয়া।”

এদিকে, ইরাকের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত মার্কিন বাহিনীর আরেক ঘাঁটি ‘আইন আল-আসাদ’ (Ain al-Assad Air Base)-এও হামলা চালিয়েছে ইরান। এক ইরাকি নিরাপত্তা কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন এপিকে, তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে।

এ হামলার আগে কাতার সতর্কতামূলকভাবে তাদের আকাশসীমা বন্ধ করে দেয়। নিরাপত্তাজনিত হুমকির কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানানো হয়।

হামলার কিছুক্ষণ আগেই ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান (Masoud Pezeshkian) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ লিখেন, “আমরা যুদ্ধ শুরু করিনি, আমরা তা চাইও না। তবে মহান ইরানের ওপর আগ্রাসন হলে আমরা নিশ্চুপ থাকব না।”

এর আগে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নজিরবিহীন স্টেলথ বোমার হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এই পাল্টা আক্রমণ ঘটে।

অন্যদিকে, ইসরায়েল সোমবার সকালে ইরানের রাজধানী তেহরানের ভেতর ‘শাসন ব্যবস্থার প্রতীক’ হিসেবে পরিচিত কয়েকটি স্থাপনায় আক্রমণ চালিয়েছে। এর মধ্যে ছিলো রাজনৈতিক বন্দিদের berkhasto berkhasto berkhasto berkhasto বন্দী করে রাখা ‘এভিন’ (Evin) কারাগারের প্রধান ফটক এবং সরকারবিরোধী বিক্ষোভ দমনকারী বাহিনীর সদর দফতর।

তেহরানের আকাশে ঘন ধোঁয়া উড়তে থাকতেই, ইসরায়েল নতুন করে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার শিকার হয়। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে দুই দেশের বেসামরিক নাগরিকদের জন্য এ ধরনের গোলাগুলি ও হামলা যেন প্রতিদিনের বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সংঘাতের একাদশ দিনে ইসরায়েল জানায়, তারা “তেহরানের কেন্দ্রস্থলে শাসন কাঠামোর মূল প্রতীক ও দমনমূলক প্রতিষ্ঠানগুলোর” ওপর হামলা চালিয়েছে। তবে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, তারা ইরানের সরকার পতনের লক্ষ্য নিয়ে এই হামলা চালাচ্ছেন না।

তবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা সামনের দিনগুলোতে তেহরানজুড়ে সামরিক ঘাঁটিগুলোতে আক্রমণ চালিয়ে যাবে। এবার তাদের লক্ষ্য কেবল কৌশলগত নয়, প্রতীকী লক্ষ্যবস্তুতেও।

এদিকে, দেশজুড়ে ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় ইরানিরা বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন।

এই উত্তেজনার মধ্যেই সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন করে উত্তাপ ছড়ান। রবিবারই ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের বোমা হামলার নির্দেশ দেওয়ার পর সোমবার তিনি তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল অ্যাকাউন্টে লিখেন, “যদি বর্তমান ইরানি সরকার ইরানকে আবার মহান করতে না পারে, তাহলে শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন হতেই পারে না কেন?”

হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট (Karoline Leavitt) পরে জানান, “ট্রাম্প কেবল একটি প্রশ্ন তুলেছেন মাত্র।” তবে ইরান সরকার পতনের এমন ইঙ্গিত তেহরানের পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া ডেকে আনে। তারা পরিষ্কার জানিয়ে দেয়, এই পরিস্থিতিতে কোনো আলোচনা সম্ভব নয় এবং তারা মার্কিন সেনা বা মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের ওপর সরাসরি প্রতিশোধমূলক হামলার হুমকি দেয়।

ইতোমধ্যেই গাজা উপত্যকায় চলমান ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *