গাজীপুর মহানগর ছাত্রদলের সদ্য ঘোষিত কমিটিকে ঘিরে যে বিক্ষোভ ও অভ্যন্তরীণ কোন্দল শুরু হয়েছিল, তা এবার আরও জটিল রূপ নিয়েছে। কমিটির বিরুদ্ধে অসন্তোষ, ঝাড়ু মিছিল ও সহিংসতার মধ্যেই এবার সামনে এলো একটি ‘অশালীন’ ভিডিওকল, যা ঘিরে ছাত্রদল ও স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র উত্তেজনা।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া এক ভিডিও কল রেকর্ডে গাজীপুর মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি রোহানুজ্জামান শুক্কুরকে এক তরুণীর সঙ্গে অশোভন এবং অনভিপ্রেত ভাষায় কথা বলতে দেখা যায়। ভিডিওটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের মধ্যে শুরু হয় তীব্র প্রতিক্রিয়া।
স্থানীয় নেতাকর্মীরা এই ঘটনাকে ‘নৈতিক অবক্ষয়ের চূড়ান্ত নিদর্শন’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। অনেকে সামাজিক মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন, “যদি সভাপতি এ ধরনের চরিত্রের হন, তাহলে স্কুল-কলেজের ছাত্রীরা কতটা নিরাপদ?” একাংশ সরাসরি প্রশ্ন তুলছেন, এই নেতৃত্বের অধীনে কীভাবে ছাত্রদল সাংগঠনিকভাবে সঠিক পথে এগোবে?
তৃণমূল থেকে কেন্দ্রীয় পর্যায় পর্যন্ত বহু নেতাকর্মী দলীয় তদন্তের মাধ্যমে ঘটনার সত্যতা যাচাই করে দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। দলের ভাবমূর্তি রক্ষায় কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে বিষয়টি উপেক্ষা না করার আহ্বান জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট মহল।
তবে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা ছাত্রদল সভাপতি রোহানুজ্জামান শুক্কুর এসব অভিযোগকে সরাসরি অস্বীকার করেছেন। তিনি দাবি করেন, “বিষয়টি আমিও শুনেছি। গতকাল রাত থেকে আমার ফেসবুক আইডি হ্যাক করা হয়েছে। কিছু স্বার্থান্বেষী মহল এবং আওয়ামী ঘরানার লোকজন মিলে এটি করেছে। তারা কৌশলে আমার হোয়াটসঅ্যাপ কল এডিট করে একটি মেয়ের সাথে কথোপকথনের মতো সাজিয়ে দিয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “আমি ওই মেয়েকে চিনি না, সে আমাদের দলের কেউও নয়। যারা কমিটি পাননি বা যারা প্রতিপক্ষ, তারাই এসব করছে। এটি একটি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র এবং ভিডিওটি সম্পূর্ণ ভুয়া।”
তবে শুক্কুরের এই ব্যাখ্যায় ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা সন্তুষ্ট নন। একাধিক ছাত্রদল নেতা জানিয়েছেন, ব্যাখ্যা নয়, এ ঘটনায় কেন্দ্রীয় কমিটিকে অবিলম্বে তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে। তারা স্পষ্ট করে বলেন, দলীয় শৃঙ্খলার প্রশ্নে আপসের কোনো সুযোগ নেই।
এই বিতর্ক যোগ হলো গাজীপুর ছাত্রদলের নতুন কমিটি ঘোষণাকে ঘিরে ইতোমধ্যেই বিদ্যমান বিভাজন ও উত্তেজনার মাঝে। কমিটি ঘোষণার পর থেকেই সেখানে বিক্ষোভ, অভিযোগ ও পাল্টা-অভিযোগে উত্তাল হয়ে উঠেছে স্থানীয় রাজনীতি। তার ওপর ভাইরাল হওয়া ভিডিওর ঘটনায় পরিস্থিতি আরও জটিল আকার নিচ্ছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এমন ঘটনায় শুধু স্থানীয় পর্যায়ের নয়, পুরো সংগঠনের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। সময়মতো কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে সংগঠনের প্রতি জনআস্থা আরও দুর্বল হয়ে পড়তে পারে।