নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের জন্য আবেদনকৃত বহু রাজনৈতিক দলের ঠিকানায় নেই বাস্তব কার্যালয়

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নিবন্ধনের আবেদন করা বহু নতুন রাজনৈতিক দল কার্যত অফিসবিহীন বলে দেখা গেছে। নির্বাচন কমিশন (Election Commission) এ জমা দেওয়া তথ্য ও সরেজমিন পরিদর্শনে এসব অসঙ্গতি উঠে এসেছে।

পুরানা পল্টনের ৫৪ নম্বর বাড়ির রহস্য

বাংলাদেশ তিসারী ইনসাফ দল (Bangladesh Tisari Insaaf Dal) পুরানা পল্টনের আজাদ প্রোডাক্টসের গলির ৫৪ নম্বর বাড়িকে কেন্দ্রীয় কার্যালয় হিসেবে উল্লেখ করে নিবন্ধনের আবেদন জমা দিয়েছে। কিন্তু সেখানে কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের চিহ্ন নেই। ভবনের তৃতীয় তলা দীর্ঘদিন বন্ধ, দ্বিতীয় তলার রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়ে গেছে, আর নিচতলায় কেবল ‘মুসলিম হোটেল অ্যান্ড কাবাব ঘর’ চালু রয়েছে। দলটির চেয়ারম্যান মো. মিনহাজ প্রধান জানান, সংস্কারকাজ চলছে, তবে স্থানীয়রা এ সম্পর্কে কিছুই জানেন না।

ঠিকানায় নেই দল, রয়েছে ট্রাভেল এজেন্সি

জাতীয় ন্যায় বিচার পার্টি (Jatiya Nyay Bichar Party) নয়াপল্টনের ইসলাম টাওয়ারের সপ্তম তলায় দলীয় কার্যালয় দেখিয়ে নিবন্ধনের আবেদন করেছে। কিন্তু সেখানে ‘আল আমিন ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস’সহ একাধিক প্রতিষ্ঠান ছাড়া রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব নেই। চেয়ারম্যান মো. কামরুজ্জামান জানান, এটি অস্থায়ী ঠিকানা।

ইউনাইটেড পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ও প্রশ্নবিদ্ধ

বাংলাদেশ ইউনাইটেড পার্টি (Bangladesh United Party) নয়াপল্টনের ডিআইটি এক্সটেনশন রোডের ৫৩ নম্বর বাড়িকে কেন্দ্রীয় কার্যালয় দাবি করলেও সেখানে কোনো রাজনৈতিক চিহ্ন পাওয়া যায়নি। দপ্তর সম্পাদক মাসুদ মিয়া নিজেও ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন।

‘জাস্টিস ফর হিউমিনিটি পার্টি’ নামে ভুয়া ঠিকানা

দক্ষিণ যাত্রাবাড়ীর ১০২/৪ নম্বর বাড়িকে দলীয় কার্যালয় বললেও এটি একটি একতলা বাড়ি, যেখানে একটি পরিবার বসবাস করে। দলের সাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন পরে সাংবাদিককে নিয়ে মূল সড়কের ৩১/সি নম্বর ঠিকানায় যান, যেখানে মূলত কয়েকটি অনলাইন ও দৈনিক পত্রিকার অফিস রয়েছে।

আজাদী পার্টি, নাগরিক পার্টি ও ডেমোক্রেটিক পার্টির বিভ্রান্তি

বাংলাদেশ আজাদী পার্টি (Bangladesh Azadi Party), বাংলাদেশ নাগরিক পার্টি (Bangladesh Nagorik Party), এবং ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি দাবি করা ঠিকানাগুলোতে অফিসের অস্তিত্ব নেই। কেউ কেউ জানান, আগে অফিস ছিল, এখন আর নেই; কেউ বলেন, নির্বাচন কমিশনের ভুলে ঠিকানা ভুল হয়েছে।

ভবনে অন্য দল, দাবি করে ভিন্ন দল

প্রীতম জামান টাওয়ারে ‘দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলন’ দলের কার্যালয় হিসেবে এক কোণার ছোট একটি কক্ষকে দেখানো হয়েছে, যদিও কক্ষটি ব্যবহার করছে জনতার অধিকার পার্টি। দলটির চেয়ারম্যান রিপন জানান, স্টিকার পড়ে গেছে।

ছোট পরিসরের অফিস, বড় স্বপ্ন

নূরজাহান শরীফ প্লাজায় ছোট একটি কক্ষে কার্যক্রম চালাচ্ছে বাংলাদেশ বেকার মুক্তি পরিষদ। সভাপতি আতিকুর রহমান জানান, তারা বেকারদের নিয়ে রাজনীতি করতে চান।

তালাবদ্ধ, অচেনা, নিরব

বাংলাদেশ ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট পার্টির ইসলাম টাওয়ারে কেন্দ্রীয় কার্যালয় তালাবদ্ধ। আশেপাশের মানুষ জানেন না দলটির রাজনৈতিক পরিচয়। চেয়ারম্যান মো. আলমগীর হোসেন দাবি করেন, আগে এখানে আইনজীবীর অফিস ছিল, পরে দলের জন্য তা ব্যবহার করা হচ্ছে।

‘জনজোট পার্টির’ সামান্য আয়োজন

বাংলাদেশ জনজোট পার্টি পল্টনের ৮৫/১ নম্বর বাড়িকে কার্যালয় হিসেবে উল্লেখ করলেও সেখানে মাত্র কয়েকটি চেয়ার, টুল ও সেলফ নিয়ে কার্যালয়ের কাঠামো গড়া হয়েছে।

নিবন্ধনের হিড়িক, বাস্তবতা ভিন্ন

নিবন্ধনের জন্য এবার ১৪৭টি রাজনৈতিক দল আবেদন করেছে। দুই দফায় জমা দেওয়া তালিকা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (Election Commission)। তবে বাস্তবতা বলছে, অধিকাংশ দলের ঠিকানা ও কার্যালয় ‘অস্থায়ী’ বা ‘অস্তিত্বহীন’।

তথ্য সূত্র: প্রথম আলো

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *