আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী বাছাই নিয়ে এক অভ্যন্তরীণ ঢেলে সাজানোর পথে হাঁটছে বিএনপি (BNP)। ৫ আগস্ট ২০২৩ সালের পর যেসব ব্যক্তি দখলবাজি কিংবা দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন—তাদের আর প্রার্থী করা হবে না, এমন এক কঠোর বার্তা ইতোমধ্যে দল থেকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে প্রার্থী বাছাইয়ে এবার শুদ্ধতার পাশাপাশি জনপ্রিয়তা ও রাজনৈতিক ভূমিকার ওপর জোর দিচ্ছে হাইকমান্ড।
প্রার্থী নির্বাচন হবে কেবলমাত্র ‘গ্রহণযোগ্যতা’র ভিত্তিতে—এই নীতিতে এগোচ্ছে তারেক রহমানের নেতৃত্বাধীন লন্ডন-ভিত্তিক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসনের দল। ভদ্র, মার্জিত, ক্লিন ইমেজধারী এবং এলাকায় গ্রহণযোগ্য এমন নেতাদের নামেই থাকবে মনোনয়নের অগ্রাধিকার। পাশাপাশি তৃণমূলের ভূমিকা বিবেচনায় এনে অন্তত ১০০ তরুণ নেতাকে মনোনয়ন দেওয়ার দিকেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
লন্ডন থেকে তদারকি, তৃণমূল থেকে তথ্য সংগ্রহে তারেক রহমান
দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান (Tarique Rahman) বর্তমানে লন্ডন থেকেই নিয়মিত সিনিয়র ও তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। সরাসরি, ভার্চুয়াল ও মধ্যস্থ মাধ্যমের মাধ্যমে তিনি প্রতিটি নির্বাচনী এলাকার তথ্য নিচ্ছেন। দলীয় প্রার্থী হিসেবে কাকে মনোনয়ন দেওয়া উচিত, তা নির্ধারণে তার আগ্রহের বিষয়গুলোও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে— কে এলাকায় সবচেয়ে জনপ্রিয়, বিগত দেড় দশকের দুঃসময়ে কে দলের পাশে ছিলেন, সামাজিক-রাজনৈতিক অবদান কেমন, এবং প্রতিদ্বন্দ্বী দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের গ্রহণযোগ্যতা কেমন— এসব প্রশ্নের উত্তরেই তৈরি হচ্ছে চূড়ান্ত চিত্র।
২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও বিএনপি তার প্রস্তুতি ডিসেম্বরের মধ্যেই প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলতে চায়। এ লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় হাইকমান্ড দলের সাংগঠনিক ইউনিটগুলোকে ইতিমধ্যে নির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছে।
নির্বাচনী মনোনয়নে থাকছে কঠিন শর্তাবলি
প্রার্থী বাছাইয়ে এবার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ শর্ত আরোপ করা হয়েছে। একদিকে সুশিক্ষিত ও ক্লিন ইমেজের প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে, অন্যদিকে যাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি বা দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, তাদের তালিকা থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে। এছাড়া আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন এমন নেতাদের গুরুত্ব আরও বাড়ছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি সংসদীয় আসন থেকে ৩ জন করে সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঠিক করে ৩০০ আসনের জন্য একটি মোট ৯০০ সদস্যের তালিকা তৈরি করা হয়েছে, যা এখন হাইকমান্ডের হাতে রয়েছে। তবে রাজনৈতিক বাস্তবতা ও স্থানীয় স্তরের প্রতিক্রিয়ার ভিত্তিতে এই তালিকায় সংযোজন ও বিয়োজন চলছে। তাছাড়া নির্বাচনী জোটের উপর নির্ভর করবে চূড়ান্ত তালিকা। ১৫ বছরে রাজপথের সঙ্গীদের জন্য ছাড় দিতে প্রস্তুত দলটি।
নারী নেত্রীদের জন্য বিশেষ পরিকল্পনা
তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে নারী নেতৃত্বের প্রসঙ্গও এবার গুরুত্ব পাচ্ছে। দলের কঠিন সময়ে যারা সাহসিকতার সঙ্গে মাঠে ছিলেন, এমন জনপ্রিয় নারী নেত্রীদের সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন দেওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত পর্যায়ে। এছাড়া হাইকমান্ডের নির্দেশনায় দলের সিনিয়র নেতারা সারাদেশের নির্বাচনী এলাকার খসড়া প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করতে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন।
সব মিলিয়ে বোঝা যাচ্ছে, আন্দোলন ও সংগঠননির্ভর, বিতর্কহীন ও তরুণ নেতৃত্বের প্রতিই এবার আস্থা রাখছে বিএনপি। এখন দেখার বিষয়, এই কৌশল শেষ পর্যন্ত কেমন ফল দেয় রাজনীতির মাঠে।