ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির জন্য ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন

ইরান-ইসরায়েলের মধ্যে সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতি চুক্তির পেছনে ‘ঐতিহাসিক ও সাহসী নেতৃত্ব’ প্রদর্শনের স্বীকৃতিস্বরূপ এবার ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump)-কে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত করেছেন মার্কিন কংগ্রেসের রিপাবলিকান (Republican) সদস্য বাডি কার্টার (Buddy Carter)। মঙ্গলবার (২৪ জুন) যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম পলিটিকস এ তথ্য প্রকাশ করেছে।

নোবেল কমিটিকে লেখা এক চিঠিতে বাডি কার্টার বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে ভয়াবহ সংঘাত থামাতে এবং পরমাণু যুদ্ধের হুমকি ঠেকাতে ট্রাম্পের নেতৃত্ব ‘অসাধারণ ও গেম-চেঞ্জিং’ ছিল। তিনি লেখেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হস্তক্ষেপ ছাড়া এই যুদ্ধবিরতি সম্ভব হতো না, যা বহু আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক অসম্ভব বলে ধরে নিয়েছিলেন।”

কার্টার আরও বলেন, “ইরানের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা দমন করতে ট্রাম্প যে দৃঢ়তা ও কৌশলী অবস্থান দেখিয়েছেন, তা শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে উদাহরণ হয়ে থাকবে।” তার ভাষ্য মতে, এই মনোনয়ন শুধু ট্রাম্পের জন্য নয়, বরং এক ভয়াবহ যুদ্ধ সম্ভাবনার মধ্যে শান্তিপূর্ণ সমাধান খুঁজে পাওয়ার এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়কে চিহ্নিত করে।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, এটাই প্রথম নয়—এর আগেও ট্রাম্প একাধিকবার শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের মনোনয়ন পেয়েছেন, যদিও এখনও তা জেতেননি। চলতি বছরের শুরুতে ড্যারেল ইসা (Darrell Issa) নামে আরেক রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান ট্রাম্পকে মনোনয়ন দেন, যুক্তি দিয়ে বলেন—তার ২০২৪ সালের নির্বাচনী জয় বিশ্বের শান্তি ব্যবস্থায় ‘অসাধারণ প্রভাব’ ফেলেছে।

২০২৫ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য ইতোমধ্যেই ৩৩৮ জন ব্যক্তি ও সংস্থা মনোনীত হয়েছেন বলে জানিয়েছে নোবেল কমিটি।

উল্লেখযোগ্যভাবে, ১২ দিনব্যাপী রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর গত সোমবার (২৩ জুন) ট্রাম্প নিজেই যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন। এরপর মঙ্গলবার রাত থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। যদিও এর মাঝে ইরান ও ইসরায়েল উভয়েই পাল্টাপাল্টি হামলা চালিয়ে গিয়েছিল।

প্রসঙ্গত, চলতি মাসের ১৩ জুন ইসরায়েল প্রথমে ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে লক্ষ্য করে হামলা চালায়। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ইরানও জবাব দেয় ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মাধ্যমে। ট্রাম্প ওই সময় ইরানকে আলোচনায় বসার জন্য একাধিকবার চাপ দেন এবং নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেন। ইরান এতে সাড়া না দিয়ে আরও আক্রমণাত্মক হয়।

যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি হস্তক্ষেপ করে এবং এক সপ্তাহ পর ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় বোমারু বিমান দিয়ে হামলা চালায়। এরপর একদিন বিরতি দিয়ে ইরান কাতারসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি মার্কিন ঘাঁটিতে রকেট হামলা চালিয়ে জবাব দেয়।

তবে ট্রাম্প পরিস্থিতিকে পুরোপুরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে না দিয়ে শেষ পর্যন্ত কূটনৈতিক পথেই সমাধানের চেষ্টা করেন। তিনি ঘোষণা দেন, “আর কোনো হামলা নয়, এখন সময় শান্তির।”

ট্রাম্পের এই ভূমিকায় শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, আন্তর্জাতিক মহলও চমকিত। এমনকি পাকিস্তান সরকারও এর আগে ২০২৬ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য ট্রাম্পের নাম সুপারিশ করার ঘোষণা দিয়েছিল। ভারত-পাকিস্তান সঙ্কট মোকাবিলায় তার ‘কার্যকর কূটনৈতিক নেতৃত্ব’ সে সময় প্রশংসিত হয়।

ট্রাম্পের শান্তির আহ্বান ও কৌশলী হস্তক্ষেপ শেষ পর্যন্ত ইরান-ইসরায়েল সংঘাতকে যুদ্ধ থেকে বিরত রাখে, যা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এক বিরল ঘটনা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *