যুদ্ধবিরতির পর দেশে ফিরতে আগ্রহ হারাচ্ছেন ইরানে থাকা বাংলাদেশিরা

মধ্যপ্রাচ্যে ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের উত্তাপ কমে যাওয়ার পর দেশে ফেরার আগ্রহ হারাচ্ছেন ইরানে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিকরা। যুদ্ধবিরতির ঘোষণার আগে যেসব বাংলাদেশি নিবন্ধন করে দেশে ফেরার পরিকল্পনা করেছিলেন, তাদের অনেকেই এখন সিদ্ধান্ত বদলাচ্ছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট মিশনগুলো জানিয়েছে, এখন আর ফিরতে আগ্রহী নন বেশিরভাগ নিবন্ধিত ব্যক্তি।

বুধবার (২৫ জুন) একাধিক কূটনৈতিক সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত ইরান থেকে দেশে ফেরার জন্য ২৫০ জন বাংলাদেশি নিবন্ধন করেছিলেন। তাদের মধ্যে প্রথম দফায় ৯২ জনকে বাসে করে পাকিস্তান সীমান্ত দিয়ে আনার পরিকল্পনা ছিল। তবে যুদ্ধবিরতির ঘোষণার পরপরই সেই সংখ্যা এক লাফে নেমে আসে ৪০-এ। পরে আরও কমে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। এক কর্মকর্তা বলেন, “বাস ভর্তি তো দূরের কথা, যাত্রীই পাওয়া যাচ্ছে না। যাত্রার আগে সংখ্যা ২০ জনের নিচে নেমে যেতে পারে।”

এই অবস্থায় সরকারি উদ্যোগ থাকলেও বাস্তবে ফিরে আসার আগ্রহ হারিয়েছেন অনেকেই। জানা যায়, পাকিস্তানের মারজাভেহ সীমান্ত দিয়ে ইরান থেকে বেরিয়ে তাফতান হয়ে করাচি পৌঁছে ট্রানজিটে দুবাই হয়ে বাংলাদেশে ফেরার পরিকল্পনা ছিল সরকারের। করাচি-দুবাই রুট ছাড়াও বিকল্প রুটের কথাও ভাবা হচ্ছিল।

সূত্র জানায়, শুরুতে নারী ও শিশুদের অগ্রাধিকার দিয়ে ফেরানোর কথা থাকলেও, এখন চিকিৎসার জন্য ইরানে থাকা নাগরিকরাই ফেরার সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে আসছেন। প্রথম দফার ৯২ জনের তালিকায় কিডনি প্রতিস্থাপনসহ নানা চিকিৎসার জন্য আগত প্রায় ২৫ জন ছিলেন। তাদের অনেকেই এখন বলছেন, বিমান চালু হলে আকাশপথেই ফিরবেন।

একটি পৃথক কূটনৈতিক সূত্র জানায়, ইরানে বর্তমানে আনুমানিক দুই হাজার বাংলাদেশি অবস্থান করছেন, এর মধ্যে তেহরানে রয়েছেন প্রায় ৪০০ জন। সরকারিভাবে তালিকাভুক্ত বাংলাদেশির সংখ্যা ৬৭২ জন, যার মধ্যে শিক্ষার্থী আছেন ৬৬ জন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ইরানে থাকা অনেক বাংলাদেশির বৈধ কাগজপত্র নেই। যুদ্ধ পরিস্থিতির শুরুর সময় আতঙ্কে দেশে ফেরার আগ্রহ দেখালেও এখন যুদ্ধ থেমে যাওয়ায় সেই আগ্রহ চলে গেছে। ফলে নিবন্ধন করেও অনেকেই আর বাসে ওঠেননি।

উল্লেখ্য, গত ১২ জুন ইসরায়েলের বিমান হামলায় ইরানে সংঘর্ষের সূচনা হয়। পাল্টা জবাব দেয় তেহরান। সংঘর্ষ চরমে পৌঁছে ২১ জুন যুক্তরাষ্ট্রের বি-২ বোমারু বিমান হামলায়, যা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাকে লক্ষ্য করে চালানো হয়। প্রায় ১২ দিন ধরে চলা এই উত্তপ্ত পরিস্থিতির পর আন্তর্জাতিক চাপ ও কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় অবশেষে ইরান ও ইসরায়েল যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছায়।

তবে যুদ্ধবিরতির পর ইরানে থাকা বাংলাদেশিদের অনেকেই এখন অপেক্ষা করছেন—আকাশপথে ফেরার সুযোগ না আসা পর্যন্ত তারা দেশে ফিরবেন না।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *