অপতথ্য প্রতিরোধে মেটাকে জবাবদিহিমূলক ভূমিকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘৃণা ও অপতথ্যের বিস্তার ঠেকাতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে মেটা (Meta)-কে আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, “একটি ভুল শব্দও আমাদের ঘনবসতিপূর্ণ দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে।”

বুধবার (২৫ জুন) সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এক বৈঠকে মেটার এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের পাবলিক পলিসি বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট সাইমন মিলনার (Simon Milner) এবং পাবলিক পলিসি ম্যানেজার রুজান সারওয়ার (Ruzan Sarwar)-এর সঙ্গে সাক্ষাতে এই আহ্বান জানান তিনি।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “সামাজিক সম্প্রীতি রক্ষার জন্য মিথ্যা ও বিদ্বেষমূলক তথ্যের বিরুদ্ধে এখনই শক্ত অবস্থান নেওয়া প্রয়োজন। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম বা হোয়াটসঅ্যাপের মতো প্ল্যাটফর্ম থেকে ভুল তথ্য ছড়ালে তার নেতিবাচক প্রভাব সারা দেশেই পড়ে।”

বৈঠকে মেটা কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশের জন্য গত পাঁচ বছর ধরে তাদের একটি ডেডিকেটেড টিম কাজ করছে। তারা বলেন, “বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে আমরা ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে প্রস্তুত, বিশেষ করে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগে।” মিলনার আরও জানান, মিথ্যা তথ্য রোধে ইতোমধ্যে তারা বিভিন্ন সংস্থা ও মানবাধিকার সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

এদিকে প্রধান উপদেষ্টা মেটা প্ল্যাটফর্মগুলোর ব্যবসায়িক সম্ভাবনা স্বীকার করলেও বলেন, “নৈতিকতা অনুসরণ না করলে এই প্রযুক্তি বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।”

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, যিনি বলেন, “মেটা এলএলএম ও এআই প্রযুক্তিতে অতিরিক্ত ইংরেজিনির্ভর। বাংলা ভাষার ব্যবহার বাড়ানো প্রয়োজন।”

তিনি বাংলাভাষায় কনটেন্ট মডারেশনে আরও দক্ষ ও স্থানীয় পটভূমি সম্পর্কে জানেন এমন পর্যালোচক নিয়োগের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

এর আগে মঙ্গলবার মেটা কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক পৃথক বৈঠকে, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের কর্মকর্তারা মেটাকে আহ্বান জানান—
– বাংলাভাষায় এলএলএম ও এআই প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ বাড়াতে,
– ভুয়া খবর এবং অপপ্রচার মোকাবেলায় মানবসম্পদ বাড়াতে, এবং
– স্থানীয় প্রেক্ষাপটে কনটেন্ট রিভিউ ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করতে।

বাংলাদেশ পুলিশ ও বিটিআরসি (BTRC)-র প্রতিনিধিরাও মেটাকে অনুরোধ করেন, যাতে—
– ক্ষতিকর কনটেন্ট দ্রুত সরিয়ে ফেলা যায়,
– অপরাধ ও হুমকি শনাক্তকরণ ব্যবস্থায় সহযোগিতা বাড়ানো হয়,
– এবং আত্মহত্যা, মব সন্ত্রাস বা বিভ্রান্তিমূলক তথ্যের সতর্কতা বিষয়ে মেটা আরও সক্রিয় ভূমিকা নেয়।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব ছিল—দেশের অভ্যন্তরে ক্যাশ সার্ভার (cache server) ও এজ রাউটার (edge router) স্থাপন। এতে ব্যান্ডউইথ ব্যবহারে কার্যকারিতা বাড়বে এবং ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা আরও জোরদার করা যাবে।

এই বৈঠকগুলোতে স্পষ্ট হয়েছে—ডিজিটাল যুগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এখন শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়, বরং একটি রাজনৈতিক, সামাজিক এবং নিরাপত্তাজনিত ইস্যু। আর সেই জবাবদিহি এখন সময়ের দাবি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *