“ডামি নির্বাচন করেছি, তবে ঘুষ নেইনি”—আদালতে হাবিবুল আউয়াল, তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর

সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল (Kazi Habibul Awal) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দাঁড়িয়ে স্বীকার করেছেন, তিনি ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে “ডামি নির্বাচন” আয়োজন করেছেন। বৃহস্পতিবার রিমান্ড শুনানিকালে বিচারকের অনুমতি নিয়ে তিনি বলেন, “হ্যাঁ, আমি ডামি নির্বাচন করেছি। তবে টাকা নিইনি, দুর্নীতি করিনি।” আদালত এদিন তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এই রিমান্ড শুনানি ঘিরে আদালতের এজলাসে উত্তেজনাপূর্ণ পরিবেশ তৈরি হয়। বিচারক মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান প্রশ্ন করেন, “আপনি এত ভালো অফিসার ছিলেন, তাহলে বিতর্কিত নির্বাচন করলেন কেন? পদত্যাগ করলেন না কেন?” উত্তরে হাবিবুল আউয়াল বলেন, “পদত্যাগ করলে ভালো হতো। তবে আগে কোনো সিইসি কি রাজনৈতিক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পেরেছেন? শেখ মুজিবুর রহমানও ক্ষমতার লোভ সামলাতে পারেননি। আমি একা কী করতাম?”

বিচারক এ সময় নির্বাচনী কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত পারিশ্রমিক দেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, “আমার সময়ে বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালনে এমন অভিজ্ঞতা ছিল না, অথচ এবার রিটার্নিং কর্মকর্তারা ৫ লাখ টাকা করে পেয়েছেন।” হাবিবুল আউয়াল জবাবে জানান, “৮ লাখ মানুষ এই নির্বাচনে যুক্ত ছিলেন, আমি তাদের কাউকে চিনিও না। এত টাকা বিল পাওয়ার খবর আমার জানা নেই।”

সাবেক সিইসি আরও বলেন, “যখন রাতের বেলায় ভোট হয়, তখন আমি গভীর ঘুমে থাকি।” এমন মন্তব্যে আদালত ও পাবলিক প্রসিকিউটরের মধ্যে বিরক্তির সঞ্চার হয়। রাষ্ট্রপক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, “এখানে সাধু সাজার কোনো সুযোগ নেই। আপনি কী করেছেন, সেটাই বলুন। শেখ হাসিনাকে আপনি নিজে গিয়ে বলেছেন, বিজয়ী ঘোষণা করে দেবো। টাকা দিলে পকেটে ঢুকিয়ে নেবো।”

আসিফ নজরুলের মতো আলোচিত উপদেষ্টার বক্তব্যের সূত্র ধরে হাবিবুল আউয়ালও বলেন, “এই দেশে এক হাজার বছরেও রাজনৈতিক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। একমাত্র কাঠামোগত সংস্কারই পারে নির্বাচনকে বিশ্বাসযোগ্য করতে।”

আদালত তখন বলেন, “জাতির প্রত্যাশা ছিল, আপনি অন্তত বিতর্কমুক্ত নির্বাচন করবেন। কিন্তু সেটি হয়নি।” উত্তরে হাবিবুল আউয়াল পাল্টা প্রশ্ন করেন, “বাংলাদেশের কোনো নির্বাচন কি বিতর্কিত হয়নি? শেখ মুজিবুর রহমানও কারচুপি করেছেন।”

শুনানির একপর্যায়ে একজন আইনজীবী বলেন, “এত ছেলেমেয়ে মরেছে আপনার জন্য।” জবাবে হাবিবুল আউয়াল প্রশ্ন তোলেন, “আমার জন্য এত ছেলেমেয়ে মরেছে?”

আসামিপক্ষের আইনজীবীরা তার বয়স, সামাজিক অবস্থান ও শারীরিক পরিস্থিতির কথা তুলে জামিন আবেদন করলেও আদালত তা নাকচ করে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

উল্লেখ্য, বিএনপি (BNP) নেতৃৃত্বাধীন জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন খান গত ২২ জুন এই মামলা দায়ের করেন। মামলায় অভিযোগ করা হয়, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নির্বাচন কমিশন ভয়ভীতি দেখিয়ে ভোটবিহীন নির্বাচন সম্পন্ন করেছে। পরবর্তীতে রাষ্ট্রদ্রোহ, প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ সংযুক্ত করে ২৪ জনের নাম এজাহারে উল্লেখ করা হয়, যার মধ্যে আছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) ও সাবেক ১৫ নির্বাচন কমিশনার।

এর আগে, এই মামলায় সাবেক সিইসি এ কে এম নুরুল হুদা (Nurul Huda) এর চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। বুধবার রাজধানীর মগবাজার থেকে হাবিবুল আউয়ালকে গ্রেপ্তার করে ডিএমপির গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *