আওয়ামী লীগ হয়তো আইনের চোখে নিষিদ্ধ হতে পারে, কিন্তু মানুষের হৃদয় থেকে মুছে ফেলা সম্ভব নয়—এই বার্তা দিলেন কাদের সিদ্দিকী (Kader Siddique)। বৃহস্পতিবার টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে এক স্মরণসভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। প্রয়াত নাসরিন সিদ্দিকীর স্মরণে আয়োজিত এই সভায় দেশের রাজনীতি, স্বাধীনতার চেতনা এবং বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতা নিয়ে খোলামেলা বক্তব্য দেন বঙ্গবীর।
বক্তব্যের শুরুতে কাদের সিদ্দিকী বলেন, “আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হতে পারে, কিন্তু মওলানা ভাসানীর আওয়ামী লীগ তো নিষিদ্ধ না, বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগও নিষিদ্ধ না। আর আওয়ামী লীগ আইনের দ্বারা নিষিদ্ধ হতে পারে, মানুষের অন্তরের দ্বারা না।” এতে স্পষ্ট হয়, ইতিহাসের ধারায় গঠিত রাজনৈতিক সংগঠনকে আইন দিয়ে রুদ্ধ করা গেলেও মানুষের বিশ্বাস থেকে মুছে ফেলা কঠিন।
স্বাধীনতার মালিকানা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, “স্বাধীনতা আমাদের, বাংলাদেশের সকল মানুষের। এটি কোনো নির্দিষ্ট দলের না—না আওয়ামী লীগের, না বিএনপির, না অধ্যাপক ইউনূস কিংবা এনসিপির।” স্বাধীনতাকে রাজনৈতিক দলের একক মালিকানার ভাবনায় দেখতে না চাওয়ার এই বক্তব্যে জনসাধারণের ব্যাপক সম্পৃক্ততা ও দায়িত্ববোধের ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
শেখ হাসিনার পদত্যাগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “শেখ হাসিনার পতন, ন্যায়ের কাছে অন্যায়ের পতন। এতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের ভূমিকা আছে, তবে সর্বোপরি এটা হয়েছে আল্লাহর ইচ্ছায় এবং দেশের জনগণের দ্বারা।” তিনি আরও সতর্ক করে বলেন, “আমি যদি শেখ হাসিনার মতো হই, তাহলে আমার পতন হবে আরও বড়। অন্য কেউ যদি শেখ হাসিনার মতো করেন, তিনিও রেহাই পাবেন না।”
তিনি রাজনৈতিক নেতৃত্বের শৃঙ্খলার অভাব নিয়েও হতাশা প্রকাশ করে বলেন, “যাঁরা নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাঁদের সম্মান হাজার বছর থাকার কথা ছিল। কিন্তু তাঁরা নিজেদের নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পেরে নিজেদের সম্মান খুইয়ে ফেলছেন।” এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে কাদের সিদ্দিকী বর্তমান নেতৃত্বের আত্মসচেতনতার অভাবের প্রতি ইঙ্গিত দেন।
পরবর্তীতে, তিনি বর্তমান ক্ষমতাসীনদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “যে জনগণের সাড়া পেয়ে আপনারা ক্ষমতায় এসেছেন, তাঁদের কথাই ভাবুন। গত ১৫-১৬ বছরে শেখ হাসিনার যেসব অন্যায় ছিল, যদি আপনারা ১৫ মাসে সেই অন্যায় করেন, তাহলে ইতিহাস আপনাদের মনে রাখবে না। দলাদলি-হানাহানি বাদ দিয়ে, প্রতিটি মানুষকে সম্মান দিয়ে নিরাপদে বসবাসের সুযোগ দিন।”
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সখীপুর উপজেলা কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি আব্দুস সবুর খান। উপস্থিত ছিলেন সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী (Abdul Latif Siddique), বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেন তালুকদার খোকা, সখীপুর উপজেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শেখ মোহাম্মদ হাবিব, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শওকত আলী মাস্টার, বীর মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস শিকদার, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, কাদের সিদ্দিকীর ছোট ভাই শামীম আল মনসুর আজাদ সিদ্দিকী, এবং সাবেক মেয়র সানোয়ার হোসেন সজীব।
আলোচনার মূল সুর ছিল—গণতন্ত্রের ভিত শক্ত করতে হলে দলমত নির্বিশেষে সব মানুষকে সম্মান দিতে হবে এবং ইতিহাসকে মিথ্যে করে রাখার কোনো সুযোগ নেই।