বিএনপির পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী পদের মেয়াদ দুইবারের বেশি না রাখার প্রস্তাবে সম্মতি দেওয়া ছিল বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বলে মন্তব্য করেছেন সাংবাদিক ও লেখক মুজতবা খন্দকার (Muztaba Khandaker)। তিনি এটিকে বাংলাদেশের জন্য ‘রেড লেটার ডে’ আখ্যা দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি স্ট্যাটাসে লিখেছেন, বিএনপির এমন সিদ্ধান্ত এক ধরনের ঐতিহাসিক ত্যাগ যা গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে।
খন্দকারের মতে, এই সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশের মূলধারার মিডিয়ায় কোনো ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া না থাকায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন তিনি। তাঁর ভাষায়, এমন সাহসী সিদ্ধান্ত যদি অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে আসত, তবে তা নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনার ঝড় উঠত।
নিচে পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো মুজতবা খন্দকারের ফেসবুক স্ট্যাটাসটি:
“বুধবার বাংলাদেশের জন্য ছিলো একটি রেডলেটার ডে…”
বুধবার বাংলাদেশের জন্য ছিলো একটি রেডলেটার ডে। ঐতিহাসিক দিন।সেদিন দেশে একটি অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটে গেছে। এক ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দশ বছর থাকতে পারবে,ঐকমত্য কমিশনের এই সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছে বিএনপি। এইটা যে বিএনপির কত বড় উদারতা সেইটা একটি ধীর স্থির ভাবে চিন্তা করলে যে কেউ উপলব্ধি করতে পারবেন। কিন্তু না,বিএনপি যে এতবড়ো একটা স্যাক্রিফাইস করলো,দেশের জন্য,গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিকীকরনের জন্য,তা নিয়ে কারো কোনো হেলদোল দেখিনা।মিডিয়াতেও নেই এইটা নিয়ে কোনো আলোচনা। অথচ বিএনপি কোন্ ছোটখাটো দাবিতে ঐক্যমত হলোনা, সেইটা নিয়ে দেখবেন খবরের কাগজগুলোতে নিজস্ব লেখকদের দিস্তার পর দিস্তা কাগজ খরচ করতে। টেলিভিশনের টকশোগুলোতে কথার তুবড়ি ফোটাতে। অথচ যে দেশে অশতিপর বৃদ্ধও কবরস্থ না হওয়া পর্যন্ত যিনি গদী ছাড়তে চায়না। সেই দেশে বিএনপি এমন একটা পিলে চমকানো ছাড় দিলো,তা নিয়ে কারো কোনো উচ্চ বাচ্য নেই। হাসিনা যদি এমন কিছু করতো,তখন তার তস্য মিডিয়া, হাসিনা বন্দনা করতে করতে ফেনা তুলে ফেলতো। দিল্লি স্টারের সম্পাদক প্রথম পাতায় থার্ড ভিউ শীরোনামে হাসিনা স্তুতি করতেন। আমি অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করলাম,আজ দিল্লী স্টার। তারা এতবড় সিদ্ধান্ত নিলো একটি রাজনৈতিক দল, অথচ পত্রিকাটি অজানা কারনে নির্বিকার! অথচ এই পত্রিকার সস্পাদক,বিএনপিকে নিয়ে দেশের গণতন্ত্র নিয়ে বিএনপির সমালোচনা করে,বছর খানেক আগে পর্যন্ত কী তীর্যক পোষ্ট এডিটোরিয়াল না ছাপাতো!
পর পর দুইবারের বেশী কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেনা। ঐক্যমত কমিশনে এমন সাহসি সিদ্ধান্ত বিএনপি বুধবার যে দিয়ে আসলো,তাঁর জন্য দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে আমি অভিনন্দন জানাই। দেশের গণতন্ত্র, এবং গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিকীকরনের জন্য তাঁর এই স্যাক্রিফাইস দেশ জাতি সব সময় শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরন করবে, এইটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
…….
তারেক রহমানের কতইবা বয়স। মালয়েশিয়ার মাহাথির মোহাম্মদের কথা না হয়,একবার চিন্তা করুন। তিনি বয়সের ভারে ন্বুজ হয়ে গেছেন। তারপরও প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। গ্যাপ দিয়ে আবার হয়েছেন।
সেখানে তারেক রহমানের কথা একবার ভাবুন,ক্ষমতার স্বাদ কি তিনি জানেননা। দীর্ঘ বিশ বছরের বেশী সময় তিনি নির্বাসিত। পাঁচ আগষ্টের অভ্যুত্থানের পর যেভাবেই নির্বাচন হোকনা কেন, তর্কিতভাবে তিনি হতেন কিম্বা হবেন দেশের প্রধানমন্ত্রী। তিনি চাইলে সম্পূর্ণ গ্রহনযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে দুইবার কেন চার থেকে পাঁচবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন। যেটা তৃতীয় বিশ্বে আমরা দেখি,কিন্তু সেই তিনি,ক্ষমতার মোহকে কিভাবে উপেক্ষা করে,মাত্র দুই টার্ম প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন,একজন ব্যাক্তি। এই প্রস্তাবে রাজী হলেন?
..
বাংলাদেশের মিডিয়া গত বিশ বছর ধরে,তারেক রহমানকে ভুলভাবে চিত্রিত করেছে। তাঁকে ভিলেন হিসেবে উপস্থাপন করেছে। হাসিনা যে ভাষায় জিয়া ফ্যামিলিকে গণভবনের দলদাস সাংবাদিকদের সামনে নির্মমভাবে উপস্থাপন করেছে,এ দেশের হাসিনা মিডিয়াও সেইভাবে বিএনপি ও জিয়া পরিবারের সাথে প্রতিনিয়ত নিষ্টুর আচরন করেছে।
..
দীর্ঘ সময়ে নির্বাসিত জীবনযাপন করার কারনে,তারেক রহমানের দেশের প্রতি,দেশের মানুষের প্রতি যে আবেগ,ভালোবাসা জন্ম নিয়েছে,সেইটা আমরা হয়তো কখনো অনুধাবন করতে পারবোনা। এই সময়ে তিনি অনেক বেশী ম্যাচুরড হয়েছেন,প্রজ্ঞাবান হয়েছেন,অনেক বেশী দেশের প্রতি তার ভালোবাসা বেড়েছে। পনের বছরে হাসিনার স্বৈর শাসনে,দেশের নীপীড়িত মানুষের মুক্তির আকাংখা তিনি ধারন করতে পেরেছেন। ইনহেরিন্ড বলে একটা কথা আছে, পারিবারিক শিক্ষা,পারিবারিক পরম্পরা। তারেক রহমানের মা,বেগম খালেদা জিয়ার গণতন্ত্রের জন্য যে সংগ্রাম, বাবার দেশের স্বাধীনতার জন্য অকুতোভয়,অনমনিয় মনোভাব, পরবর্তীতে রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে দেশকে নিয়ে তাঁর ভাবনা, তার কর্মকান্ড সব তিনি দেখেছেন। মা খালেদা জিয়া তঁকে তার বিভিন্ন রাজনৈতিক সমাবেশে নিয়ে গিয়েছেন। তিনি নিজে প্রত্যক্ষ করেছেন,মা’ র গণতন্ত্রের প্রতি অবিচল আস্থা। বাবার দেশের প্রতি কমিমেন্ট। আর এসব ধারন করে,তিনি দিনে দিনে হয়ে উঠেছেন, উদার গণতান্ত্রিক নেতা।
…
আমি যত দেখছি,তত বিস্মিত হচ্ছি। তাঁর দেশপ্রেম। তাঁর গনতান্ত্রিক আচার আচরন,তার রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা, গনতন্ত্রের প্রতি তাঁর আস্থা। তাঁর নিজেকে ক্ষমতায়িত করার প্রতি নির্বিকার মনোভাব। নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপি সব সময় পরিবারতন্ত্র, পরিবার তন্ত্র বলে আমাদের কান ঝালাপালা করতো। দুইবারের বেশী প্রধানমন্ত্রী নয়, তারেক রহমানের এই যে দুরদর্শী সিদ্ধান্ত তাদের অনেকের মুখে চপেটাঘাতের সমান।
..
আমি খুব আশাবাদি,খুবই,বিএনপি এই মুহুর্তে দেশের সবচেয়ে একক বৃহত্তম দল। তারা চাইলে যাচ্ছেতাই করতে পারে,কিন্তু সেই দলের ডিসিপ্লিন, সেই দলের মানসিকতা,সবাইকে স্পেস দেয়া।এইটা এই দেশের জন্য বড় ধরনের অগ্রগতি।
বিএনপি যদি পথ না হারায়, তবে এদেশের গনতন্ত্রের অভিযাত্রা কেউ ঠেকাতে পারবেনা বলে আমার বিশ্বাস। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে আমার আবারে টুপি খোলা স্যালুট🙏