সীমিত ক্ষমতার উচ্চকক্ষের নতুন প্রস্তাবে পিআর পদ্ধতি মেনে নিতে আহ্বান ৬০ নাগরিকের

উচ্চকক্ষ গঠনে প্রাপ্ত ভোটের অনুপাত (PR) পদ্ধতি অন্তর্ভুক্ত করে রাষ্ট্রের ক্ষমতার ভারসাম্য নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দেশের ৬০ জন বিশিষ্ট নাগরিক। সোমবার (৩০ জুন) এক বিবৃতিতে তাঁরা জুলাই সনদে এই পদ্ধতি যুক্ত করার দাবি জানান।

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করা উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন মানবাধিকারকর্মী আইরিন খান (Irene Khan), আলোকচিত্রি শহিদুল আলম, অর্থনীতিবিদ জ্যোতি রহমান, জিয়া হাসান, উদ্যোক্তা ফাহিম মাশরুর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রুশাদ ফরীদি, আইনজীবী মানজুর আল মতিন, সাংবাদিক আশরাফ কায়সার, ব্যারিস্টার মিতি ফারজানা, অধ্যাপক ড. অতনু রব্বানী এবং প্রকাশক মাহরুখ মহিউদ্দীন।

পিআর পদ্ধতিকে ঘিরে রাজনৈতিক মতানৈক্য

বিএনপি (BNP)-১২ দলীয় জোট সহ বেশ কিছু দল দাবি করেছে, নিম্নকক্ষে পাওয়া আসনের অনুপাতে উচ্চকক্ষে আসন বণ্টন হোক। অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামি, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন, এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলন (Ganosamhati Andolon), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, নাগরিক ঐক্য, জেএসডি চায় ভোটের অনুপাত অনুযায়ী উচ্চকক্ষ গঠন করা হোক।

এদিকে চারটি দলের অবস্থান এখনো অস্পষ্ট। তবে বিএনপি বলছে, যদি সংবিধান সংশোধনে উচ্চকক্ষে দুই-তৃতীয়াংশের বাধ্যবাধকতা রাখা হয়, তবে পিআর পদ্ধতি গ্রহণযোগ্য।

ক্ষমতার ভারসাম্যে পিআর পদ্ধতির তাৎপর্য

৬০ নাগরিকের বিবৃতিতে স্পষ্টভাবে বলা হয়, বিএনপি-সমর্থিত প্রস্তাব অনুযায়ী কেবল আসনের অনুপাতে উচ্চকক্ষ গঠনের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আসবে না। বরং ভোটের অনুপাতে উচ্চকক্ষ গঠিত হলে সরকারের প্রতি আরও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে এবং “চেক অ্যান্ড ব্যাল্যান্স” প্রতিষ্ঠিত হবে।

তাঁরা আরও বলেন, ভবিষ্যতে কোনো দল যদি নিম্নকক্ষে একচ্ছত্র সংখ্যাগরিষ্ঠতাও পায়, তবুও পিআর পদ্ধতির উচ্চকক্ষে তারা সহজে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না। তাছাড়া ছোট রাজনৈতিক দল যারা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ভোট পেলেও সংসদে প্রতিনিধিত্ব পায় না, তারা উচ্চকক্ষে স্থান পেলে গণতান্ত্রিক ভারসাম্য রক্ষা হবে।

সীমিত ক্ষমতার উচ্চকক্ষের প্রস্তাব

বিবৃতিতে প্রস্তাব করা হয়, উচ্চকক্ষ যেন রাষ্ট্র পরিচালনার দৈনন্দিন কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ না করে। বরং তাদের ভূমিকা থাকবে সংবিধান সংশোধন, যুদ্ধ ঘোষণা প্রভৃতি বিষয় ছাড়া অন্য প্রস্তাবিত আইনের ওপর পর্যবেক্ষণ এবং সুপারিশ প্রদানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।

এই কাঠামোর মধ্য দিয়ে নাগরিকরা আশা প্রকাশ করেন, এটি সরকারের একনায়কতামূলক মনোভাবের লাগাম টানবে এবং বিরোধী দলগুলো কার্যকর সংসদীয় প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারবে।

রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তনের প্রত্যাশা

বিবৃতিতে বাংলাদেশের রাজনীতিতে “জয়ী সব পাবে” সংস্কৃতির সমালোচনা করে বলা হয়েছে, ক্ষমতাসীনরা কখনো বিরোধীদের সম্মান দেয়নি, আবার বিরোধীরাও দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ করে জাতীয় স্বার্থকে হুমকির মুখে ফেলেছে।

নাগরিকদের ভাষায়, “আমরা বিশ্বাস করি, পিআর পদ্ধতিতে গঠিত উচ্চকক্ষ সহযোগিতা ও আলোচনার নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে সহায়ক হবে।”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *