‘গণঅভ্যুত্থান ২০২৪: জাতীয় ঐক্য ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা’—এই প্রতীকী শিরোনামে আয়োজিত বিএনপির আলোচনাসভা মঙ্গলবার (১ জুলাই) পরিণত হলো অপ্রত্যাশিত এক নাটকীয়তায়। অনুষ্ঠানের শুরুতেই দর্শকদের তীব্র আপত্তির মুখে মঞ্চ থেকে নামিয়ে দেওয়া হয় বিতর্কিত উপস্থাপক এহসান মাহমুদ (Ehsan Mahmud)-কে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এই আয়োজনে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান (Tarique Rahman), এবং সরাসরি উপস্থিত ছিলেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (Mirza Fakhrul Islam Alamgir) ও অন্যান্য সিনিয়র নেতৃবৃন্দ।
বেলা তিনটায় অনুষ্ঠান শুরু হলে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি অনুষ্ঠানের উপস্থাপনায় তিনজনের নাম ঘোষণা করেন—একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, একজন জাহাঙ্গীরনগরের শিক্ষিকা, এবং তৃতীয়জন সাংবাদিক এহসান মাহমুদ।
কোরআন তেলাওয়াত ও দোয়ার পর এহসান মাহমুদ মঞ্চে উঠে নীরবতা পালনের আহ্বান জানান। তবে ঠিক সেই সময়ই সম্মেলনস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকরা জোর প্রতিবাদ জানিয়ে ‘ফ্যাসিস্ট, ফ্যাসিস্ট’ স্লোগান দিতে শুরু করেন। অভিযোগ ওঠে, এহসান মাহমুদ অতীতে স্বৈরাচারী সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। বিএনপির নেতাকর্মীরাও এই প্রতিবাদে যুক্ত হন।
ঘটনার পরপরই রিজভী আহমদ, মির্জা ফখরুল, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি এবং অন্যান্য নেতা উঠে দাঁড়ান। ভার্চুয়ালি যুক্ত থাকা তারেক রহমান তখন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছিলেন। আয়োজকরা সিদ্ধান্ত নেন, এহসান মাহমুদকে মঞ্চ থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে। এরপর তিনি আর অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন না।
এ নিয়ে উপস্থিত এক সিনিয়র সাংবাদিক বলেন, “একসময় মুজিব কোট পরে ঘুরতেন এহসান মাহমুদ। আওয়ামী লীগ ও জাসদের নেতাদের সঙ্গে ওঠাবসা ছিল। এখন হঠাৎ করেই বিএনপির ‘বড় বুদ্ধিজীবী’ হয়ে উঠেছেন!”
বিএনপির এক তরুণ কেন্দ্রীয় নেতা বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, “১৭ বছর ধরে এই সাংবাদিককে দেখিনি। হঠাৎ করে এত গুরুত্বপূর্ণ আয়োজনে কিভাবে মূল দায়িত্বে চলে এলেন বুঝি না। বিএনপিতে কি উপস্থাপনা করার মতো আর কেউ ছিল না?”
বিতর্কিত এই ঘটনা আবারো তুলে ধরেছে বিএনপির অভ্যন্তরীণ সমন্বয় ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের দুর্বলতা। যখন দলটি জাতীয় ঐক্যের ডাক দিচ্ছে, তখন এমন বিতর্ক দলটির ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে।