উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের নামে পিস্তল ও শটগানের ২টি লাইসেন্স ইস্যু করা হয় কুমিল্লা থেকে

সরকারের গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া (Asif Mahmud Sajib Bhuiyan) সম্প্রতি অস্ত্রের লাইসেন্স এবং একটি বিমানবন্দরে ম্যাগাজিন বহনের ঘটনায় তীব্র আলোচনার মুখে পড়েছেন।

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন, সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করা আসিফ মাহমুদ কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের মাধ্যমে দুটি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স নিয়েছেন। তার নামে পিস্তলের লাইসেন্স নম্বর ১২৫৪ এবং শটগানের লাইসেন্স নম্বর ১৬৯১ ইস্যু হয়েছে যথাক্রমে ২০২৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর ও ৩ ডিসেম্বর। যদিও অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনে অস্ত্রের লাইসেন্স পেতে আবেদনকারীর বয়স কমপক্ষে ৩০ বছর হওয়া আবশ্যক, আসিফের বয়স মাত্র ২৫ বছর ১১ মাস ১৮ দিন। এছাড়া, আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্স পেতে প্রয়োজনীয় আয়কর প্রদানের শর্তও তিনি পূরণ করেননি।

তবে অস্ত্র আইনের একটি বিশেষ ধারা অনুযায়ী, স্পিকার, মন্ত্রী, উপমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা তাদের সমমর্যাদার কর্মকর্তাদের জন্য বয়স ও আয়কর শর্ত প্রযোজ্য নয়। উপদেষ্টা হিসেবে আসিফ মাহমুদ সেই সুবিধার আওতায় পড়ায়, এসব শর্ত ছাড়াই তিনি লাইসেন্স পেয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে, রবিবার সকালে ‘ওআইসি ইয়ুথ ক্যাপিটাল–২০২৫’ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে মরক্কো (Morocco) যাওয়ার পথে, তিনি তুরস্ক হয়ে যাত্রা করছিলেন তার্কিশ এয়ারলাইন্স (Turkish Airlines)-এর TK-713 ফ্লাইটে। ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে (Hazrat Shahjalal International Airport) প্রি-বোর্ডিং স্ক্রিনিংয়ের সময় তার হাতে থাকা একটি ছোট ব্যাগে (পাউচে) একটি অ্যামোনেশন ম্যাগাজিন পাওয়া যায়।

বিমানবন্দরের নিরাপত্তাকর্মীরা বিষয়টি শনাক্ত করার পর, আসিফ তাৎক্ষণিকভাবে ম্যাগাজিনটি তার প্রোটোকল অফিসারের কাছে হস্তান্তর করেন এবং দুঃখ প্রকাশ করেন। তবে দেশের বাইরে যাবার সময় লাইসেন্সকৃত অস্ত্র এবং ব্যবহৃত গুলি থানায় জমা দেবার আইন থাকলেও গুলি সহ ম্যাগাজিন কিভাবে তার ব্যাগে থেকে গেল তা নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। এমনকি গুলি সহ ম্যাগাজিন তার প্রোটোকল অফিসারের হাতে কিভাবে কোন আইনে তুলে দিলেন তা নিয়েও জানা যায়নি কোনো ব্যাখ্যা।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (CAAB), আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন সংস্থা (ICAO) এবং আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহন সংস্থা IATA-র নির্দেশনা অনুযায়ী, যাত্রীদের কেবিন ব্যাগে ম্যাগাজিন বা গুলি বহন কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। তবে সঠিকভাবে প্যাকেজ করা ও পূর্ব ঘোষণা দিয়ে লাগেজে এসব বহনের অনুমতি রয়েছে।

ঘটনাটি সামনে আসার পর তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়। বিতর্কের উত্তাপে উপদেষ্টা আসিফ নিজেই তার ফেসবুকে একটি ব্যাখ্যামূলক স্ট্যাটাস দেন, যেখানে তিনি বিষয়টি ‘অনিচ্ছাকৃত’ এবং ‘মানবিক ভুল’ বলে উল্লেখ করেন।

অন্যদিকে, এই ঘটনার পর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ভিভিআইপি ও ভিআইপি যাত্রীদের ব্যাগেজ স্ক্রিনিংয়ে কড়াকড়ি আরোপ করেছে।

নিরাপত্তা জোরদারে গ্রহণ করা ছয় দফা পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে—
– ভিভিআইপি ও ভিআইপি যাত্রীদের ব্যাগেজ স্ক্রিনিংয়ে বাড়তি গুরুত্ব প্রদান।
– নিয়মিতভাবে এভিয়েশন সিকিউরিটির সদস্যদের সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক ব্রিফিং।
– সিসিটিভি মনিটরিংয়ে বিশেষ নজরদারি।
– মেটাল ডিটেক্টর ও এক্স-রে স্ক্যানের পর সন্দেহজনক ব্যাগের ম্যানুয়াল তল্লাশি বাধ্যতামূলক।
– আগ্নেয়াস্ত্র বহনকারীদের বিমানবন্দরে প্রবেশের পূর্বানুমতি নিশ্চিতকরণ ও রেকর্ড সংরক্ষণ।
– যেকোনো ‘সিকিউরিটি ব্রিচ’ ঘটলে তাৎক্ষণিক তদন্ত ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ।

এই আলোচিত ঘটনার প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠেছে, কীভাবে একজন বয়সে অযোগ্য ও কর প্রদানে অনুপযুক্ত ব্যক্তি অস্ত্রের লাইসেন্স পেলেন? সরকারি সুবিধাপ্রাপ্ত পদে থেকেও কি একজন উপদেষ্টার আরও দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশিত নয়?

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *