সাময়িক বরখাস্তের পর এবার চূড়ান্ত শাস্তি—তাপসী তাবাসসুম ঊর্মি (Taposi Tabassum Urmi)-কে সরকারি চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিতর্কিত স্ট্যাটাস দেওয়ায় আলোচনায় আসেন এই প্রশাসনিক কর্মকর্তা। আজ বুধবার তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার রায় প্রকাশের মাধ্যমে তাকে ‘চাকরি হতে বরখাস্তকরণ’ গুরুদণ্ড দেওয়া হয়।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সহকারী কমিশনার পদে কর্মরত থাকাকালে ফেসবুকে বিতর্কিত মন্তব্য করে নজরে আসেন তাপসী। স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছিলেন, ‘সাংবিধানিক ভিত্তিহীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, রিসেট বাটনে পুশ করা হয়েছে। অতীত মুছে গেছে। রিসেট বাটনে ক্লিক করে দেশের সব অতীত ইতিহাস মুছে ফেলেছেন তিনি। এতই সহজ! কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গেছে আপনার, মহাশয়।’
এই স্ট্যাটাসে পরোক্ষভাবে ড. ইউনূস (Dr. Yunus)-কে উদ্দেশ করে কটাক্ষ করা হয় বলে ধারণা করা হয়, যিনি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। স্ট্যাটাসটি মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়, সৃষ্টি করে প্রবল রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক বিতর্ক।
তাপসী তাবাসসুমের বিরুদ্ধে শুধু এই স্ট্যাটাসই নয়, বরং স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদ আবু সাঈদ (Abu Sayeed)-কে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য এবং ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সরকারের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। তিনি একাধিক পোস্টে সাবেক সরকারের পক্ষে সরব ছিলেন, যা সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে তার নিরপেক্ষতা ও দায়িত্বজ্ঞানহীনতার প্রশ্ন তোলে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বিভাগীয় মামলার তদন্তে তাপসী তাবাসসুমের বিরুদ্ধে ‘অসদাচরণ’-এর অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। সে অনুযায়ী তাকে সরকারি চাকরি থেকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি বর্তমানে সহকারী সচিব (ওএসডি) হিসেবে কর্মরত ছিলেন এবং ইতিমধ্যেই সাময়িকভাবে বরখাস্ত অবস্থায় ছিলেন।
এ ঘটনায় প্রশাসনের ভেতরে যেমন তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি সামাজিক মাধ্যমেও মতভেদ স্পষ্ট। কেউ কেউ এটিকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখলেও, অনেকেই একজন সরকারি কর্মকর্তার কাছ থেকে এমন রাজনৈতিক মন্তব্যকে অগ্রহণযোগ্য বলছেন।
সরকারি চাকরির নিয়ম অনুযায়ী, কোন কর্মকর্তার সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারেও শিষ্টাচার বজায় রাখতে হয়। বিশেষ করে রাষ্ট্র ও সংবিধান নিয়ে মন্তব্য করতে হলে তা হতে হয় যথেষ্ট দায়িত্বশীল। এ প্রেক্ষিতেই তাপসীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হলো বলে মনে করছে প্রশাসনিক মহল।