চট্টগ্রামের পটিয়া থানায় ছাত্রলীগ নেতা দীপঙ্কর তালুকদারকে ঘিরে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক সহিংস ঘটনায় মুখ খুলেছেন আল জাজিরার অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সাইর সামি (Zulkarnain Saer Sami)। সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত এক দীর্ঘ ও প্রতিবাদী স্ট্যাটাসে তিনি পটিয়ায় সংঘটিত ঘটনাকে ‘ভদ্র, সভ্য সমাজের জন্য সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
সায়ের সামির বক্তব্যে উঠে এসেছে আইন-শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান, রাষ্ট্রের সহনশীলতা নীতি নিয়ে সতর্কতা এবং রাজনৈতিক মতপার্থক্যের নামে সহিংসতার বিরুদ্ধাচরণ।
তিনি লিখেছেন, “এই দেশ সবার — আওয়ামী লীগ কর্মী-সমর্থকদেরও। দীপঙ্কর যদি কোনো অপরাধ না করে থাকে, তবে তার স্বাভাবিক জীবনযাপনের অধিকার আছে। এই দেশের ওই অরাজনৈতিক গুন্ডাদের মতোই তারও অধিকার আছে — দেশটা কারো বাপের না!”
সায়ের জানান, ১ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন (Students Against Discrimination)-এর চট্টগ্রাম ইউনিটের নেতা খান তালাত মাহমুদ রাফির নেতৃত্বে দীপঙ্কর তালুকদারকে ধরে মারধর করা হয় এবং তাকে পটিয়া থানায় আনা হয়। তবে থানার অফিসার ইনচার্জ দীপঙ্করের বিরুদ্ধে কোনো মামলা না থাকায় তাকে গ্রেপ্তারে অস্বীকৃতি জানান।
এই সিদ্ধান্ত মেনে না নিয়ে উত্তেজিত জনতা থানায় ভাঙচুর চালায়। সায়েরের ভাষায়, “গুন্ডারা পুলিশের দিকে ইটপাটকেল ছুড়লে আটজন পুলিশ কর্মকর্তা আহত হন। শেষ খবর পর্যন্ত সেনাবাহিনীকে অতিরিক্ত বাহিনী হিসেবে ডাকা হয়েছে এবং থানা পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে ওই জনতা।”
সায়ের দাবি করেন, “এই নৈরাজ্যে বিদেশে বসবাসরত এক উগ্রপন্থী প্যারিস-ভিত্তিক কর্মী সক্রিয়ভাবে উসকানি দিচ্ছে।”
তিনি সরকারকে আহ্বান জানিয়ে বলেন, “সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে দীপঙ্করের ওপর হামলা, সরকারি সম্পত্তির ক্ষতি এবং অন্য অসামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িত সবাইকে গ্রেপ্তার করতে হবে। দেশে আইন-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এখন জরুরি। যথেষ্ট হয়েছে।”
স্ট্যাটাসের শেষাংশে সায়ের স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দেন, “আমি ও অসংখ্য মানুষ গত এক দশকে জীবন ও ক্যারিয়ার ঝুঁকির মুখে ফেলে এই দেশকে জাহান্নাম বানানোর জন্য সংগ্রাম করিনি। আমাদের সহ্যশক্তি নিয়ে খেলো না। আমরা একজন স্বৈরশাসককে হটিয়েছি, যদি তোমরা লাল রেখা অতিক্রম করো, তাহলে তোমাদেরও সরাতে দ্বিধা করবো না।”
তিনি আরও সতর্ক করে বলেন, “তোমরা যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছ, তোমরা সেই লাল রেখার কাছাকাছি চলে যাচ্ছ।”
সায়ের সামির এই বক্তব্য সামাজিক মাধ্যমে তীব্র আলোড়ন তুলেছে। অনেকেই একে মতপ্রকাশের সাহসিকতা হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ কেউ এতে রাজনৈতিক পক্ষপাতের আশঙ্কাও দেখছেন। তবে এটুকু স্পষ্ট—তিনি সহিংস রাজনীতির বিরুদ্ধে এবং আইনের শাসনের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছেন।