রাষ্ট্রপতির ক্ষমার বিধান পরিবর্তন ও বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণে রাজনৈতিক ঐকমত্য: আলী রীয়াজ

রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শন সংক্রান্ত বিধান এবং বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ বিষয়ে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ (Ali Riaz)।

বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের নবম দিনের আলোচনার পর এক ব্রিফিংয়ে তিনি এই তথ্য জানান। আলোচনায় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, সিপিবি, গণসংহতি, এনসিপিসহ মোট ৩০টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়।

ব্রিফিংয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, সফর রাজ হোসেন, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।

রাষ্ট্রপতির ক্ষমা: অপব্যবহার ঠেকাতে প্রস্তাবিত পরিবর্তন

আলী রীয়াজ বলেন, “বিগত সময়ে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতার ব্যাপক অপব্যবহার হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো সংবিধানের ৪৯ নম্বর অনুচ্ছেদ সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পেরেছে।”

তিনি জানান, সংশোধনের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, “রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতা আইন দ্বারা নির্ধারিত মানদণ্ড, নীতি ও পদ্ধতির মাধ্যমে প্রয়োগ করতে হবে।”

বর্তমানে ৪৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা প্রায় একচ্ছত্র। রাজনৈতিক দলগুলোর অভিমত, এ ক্ষমতা আরও কাঠামোবদ্ধ ও জবাবদিহিমূলক হওয়া উচিত।

আলী রীয়াজ আশা প্রকাশ করে বলেন, “এই ঐকমত্য সংবিধানে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে বাস্তবায়ন হলে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার অপব্যবহার বন্ধ হবে।”

বিচার বিভাগ বিকেন্দ্রীকরণে ঐকমত্য

বিচার বিভাগের কাঠামোগত সংস্কার নিয়েও আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে বলে জানান আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, “রাজধানীতে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান আসন থাকবে, তবে প্রতিটি বিভাগে প্রধান বিচারপতির অধীনে এক বা একাধিক হাইকোর্ট বেঞ্চ থাকবে—এই প্রস্তাবে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে।”

বর্তমান সংবিধানের ১০০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী হাইকোর্টের কার্যক্রম শুধু ঢাকাতেই সীমিত থাকে। নতুন এই প্রস্তাব অনুযায়ী, বিভাগীয় শহরগুলোতেও হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে, যা বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি কমাবে এবং বিচার ব্যবস্থায় গতিশীলতা আনবে।

আরও যেসব বিষয়ে হয়েছে আলোচনা

ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, এ পর্যন্ত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় যেসব বিষয়ে রাজনৈতিক ঐক্যমত্য গঠিত হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে:
– সংবিধানের ৭০ নম্বর অনুচ্ছেদ (দলীয় শৃঙ্খলার প্রশ্নে সংসদ সদস্যদের স্বাধীনতা)
– সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিত্ব ব্যবস্থা
– নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনর্নির্ধারণ
– রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শন সংক্রান্ত বিধান
– বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ

কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আগামী ৭ জুলাই পরবর্তী বৈঠকের দিন ধার্য করা হয়েছে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এই উদ্যোগকে অনেকেই স্বাগত জানাচ্ছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি যদি বাস্তবায়নে রূপ নেয়, তবে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও বিচার ব্যবস্থায় বড় ধরণের কাঠামোগত পরিবর্তন সম্ভব হতে পারে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *