যুক্তরাষ্ট্র (United States) ও বাংলাদেশের মধ্যকার প্রস্তাবিত শুল্ক চুক্তির খসড়া এখনো চূড়ান্ত হয়নি। দুই দেশের মধ্যে একাধিক বিষয়ে মতপার্থক্য থাকায় আলোচনা স্থবির হয়ে পড়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের কঠিন ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যনীতির পরিপন্থী শর্তের কারণে সমঝোতায় পৌঁছাতে বেগ পেতে হচ্ছে বাংলাদেশকে।
বৃহস্পতিবার (স্থানীয় সময়) সকালে ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি দপ্তর (ইউএসটিআর) (USTR) ও বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকটি কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়। বৈঠকে অংশ নেন অন্তর্বর্তী সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান এবং বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা। বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান অনলাইনে যুক্ত ছিলেন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, ৮ জুলাই আবারও ইউএসটিআরের সঙ্গে আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। ওই বৈঠকে অংশ নিতে শনিবার ঢাকা ছাড়বেন বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান। সফরকালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের আরও কিছু সরকারি সংস্থার সঙ্গে আলোচনায় বসবেন।
মূল বিরোধের কেন্দ্রে রয়েছে ট্রাম্প প্রশাসনের অতিরিক্ত ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ এবং সেই শুল্ক প্রত্যাহারের সম্ভাব্যতা ঘিরে পাঠানো একটি চুক্তির খসড়া। বাংলাদেশের দৃষ্টিতে, খসড়ায় এমন কিছু শর্ত রয়েছে, যেগুলো আন্তর্জাতিক বাণিজ্যনীতির পরিপন্থী এবং ‘সর্বাধিক অনুকূল রাষ্ট্র’ নীতির বিরোধী।
বিশেষভাবে আপত্তিকর হিসেবে উঠে এসেছে দুটি শর্ত—
- যুক্তরাষ্ট্র যদি অন্য কোনো দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা বা বাড়তি শুল্ক আরোপ করে, বাংলাদেশকেও তাতে সঙ্গ দিতে হবে।
- যুক্তরাষ্ট্রের যেসব পণ্যে বাংলাদেশ শুল্ক ছাড় দেবে, সেসব পণ্যে যেন অন্য কোনো দেশকে একই সুবিধা না দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ বলছে, এ ধরনের একচেটিয়া শর্ত বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নীতিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং কোনো স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য গ্রহণযোগ্য নয়।
চুক্তির খসড়ার ওপর বাংলাদেশ ইতোমধ্যে তিন দফা মতামত দিয়েছে এবং এখন পর্যন্ত তিনবার বৈঠক হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান থেকে নড়ছে না বলে আলোচনা জটিল আকার নিচ্ছে। সূত্র বলছে, শুধু বাংলাদেশ নয়, ইন্দোনেশিয়াও যুক্তরাষ্ট্রের কঠিন শর্তের কারণে প্রস্তাবিত চুক্তি থেকে পিছিয়ে এসেছে, যদিও শুরুতে তারা আগ্রহ দেখিয়েছিল।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত বুধবার সামাজিক মাধ্যমে জানান, তাদের সঙ্গে ভিয়েতনামের (Vietnam) একটি চুক্তি হয়েছে। তাতে যুক্তরাষ্ট্র ভিয়েতনামের পণ্যে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবে, তবে ভিয়েতনাম মার্কিন পণ্যে শুল্ক আরোপ করবে না।
প্রসঙ্গত, গত ২ এপ্রিল ট্রাম্প প্রশাসন মার্কিন বাণিজ্য ঘাটতি মোকাবেলায় পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়, যার আওতায় বাংলাদেশের একাধিক পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তি শুল্ক বসানো হয়। তবে পরে ৯ এপ্রিল তিন মাসের জন্য তা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই স্থগিতাদেশের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৮ জুলাই। তার আগেই ঢাকা একটি ভারসাম্যপূর্ণ সমঝোতায় পৌঁছাতে আগ্রহী, যাতে রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
চুক্তি চূড়ান্ত না হলে স্থগিতাদেশের মেয়াদ শেষে আবারও শুল্ক কার্যকর হতে পারে, যা বাংলাদেশের তৈরি পোশাক ও অন্যান্য রপ্তানি খাতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।