চবি ভিসির দপ্তরে শিক্ষার্থীদের হট্টগোল নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া, ‘এই দেশে ভালো মানুষরা সম্মান পায় না’ — ড. কামরুল হাসান

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপাচার্যের দপ্তরে একদল শিক্ষার্থীর উত্তেজনাকর প্রবেশ, প্রকাশ্য হট্টগোল এবং শিক্ষক বরখাস্তের দাবিতে আঙুল উঁচিয়ে দেওয়া মন্তব্য নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জোর আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এমন একটি ঘটনায় বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ড. কামরুল হাসান মামুন (Dr. Kamrul Hasan Mamun), যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের প্রখ্যাত অধ্যাপক।

শনিবার (৫ জুলাই) সকালে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, “চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পদোন্নতির সাক্ষাৎকার দিতে আসা একজন শিক্ষককে বরখাস্তের দাবিতে একদল শিক্ষার্থী উপাচার্যের কক্ষে ঢুকে গিয়ে যে ধরনের হট্টগোল করেছে তা অকল্পনীয়। এমনকি তারা উপাচার্যকে আঙুল উঁচিয়ে বলে, ‘স্যার, আপনি নিজের যোগ্যতায় আসেননি, আমরা বসাইছি।’ এটি দেশের চারটি প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটির ভেতরেই ঘটছে!”

অধ্যাপক মামুন লেখেন, “উপাচার্য প্রফেসর ইয়াহিয়াকে এক শিক্ষার্থীর এভাবে আঙুল উঁচিয়ে কথা বলা—তা শুনে স্তব্ধ হয়ে যেতে হয়। একজন শিক্ষার্থী যখন এমন ভাষা প্রয়োগ করে তখন ভিসির আর এক মুহূর্তও সে পদে থাকা উচিত নয়। তার পদত্যাগ একটি ‘ক্যাসকেডিং ইফেক্ট’ তৈরি করতে পারে, যেখান থেকে একটি ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা হতে পারে।”

তিনি বলেন, “যতদূর জানি, প্রফেসর ইয়াহিয়া একজন ভালো মানুষ। কিন্তু এই দেশে ভালো মানুষরা সম্মান পায় না। যদি তিনি খারাপ হতেন তাহলে শিক্ষক ও ছাত্রদের ভেতরে যারা ‘গুন্ডা প্রকৃতির’, তারা হয়তো তার চারপাশ ঘিরে রাখতো।”

প্রেক্ষাপট হিসেবে তিনি মন্তব্য করেন, “আমাদের দেশের বড় পদে যাওয়া মানুষজন কখন পদত্যাগ করতে হয় তা জানেন না। যত অপমানই হোক, পদ আঁকড়ে থাকেন যতক্ষণ না বাধ্য করা হয়। এটি এক ধরনের অযোগ্যতার প্রতীক।”

সামগ্রিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে রাজনৈতিক প্রভাব এবং তার নেতিবাচক প্রতিফলন নিয়েও তিনি শঙ্কা প্রকাশ করেন। তার মতে, “৫ আগস্টের পর যেসব নিয়োগ হয়েছে, শিক্ষার্থীরা মনে করে তারা নিজেরাই বসিয়েছে। এমনকি তারা প্রধান উপদেষ্টাকেও নিজেদেরই নিযুক্ত ভাবছে—যা উনি নিজেও বারবার বলেছেন। শিক্ষার্থীদের এমন ধারণা রাজনৈতিক নেতৃত্ব থেকেই এসেছে, যিনি সেদিন উল্টো ছাত্রদের উৎসাহ দিয়েছেন। ফলাফল হচ্ছে—আজকের এই চরম বিশৃঙ্খলা।”

একটি গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে অধ্যাপক মামুন জানান, ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ইসলামী ছাত্রশিবির (Islami Chhatra Shibir) নেতা হাবিবুল্লাহ খালেদ উপাচার্যের সামনে উচ্চস্বরে কথা বলছেন, অন্যরা হট্টগোল করছেন এবং শিক্ষক কুশল বরণ চক্রবর্তী সেখানেই উপস্থিত। এই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ইয়াহিয়া আখতার, সহ-উপাচার্য (অ্যাকাডেমিক) অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান, ও সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিনও উপস্থিত ছিলেন। তবে এই পুরো পরিস্থিতিতে ভিসিকে একেবারে নির্লিপ্ত অবস্থায় চেয়ারে বসে থাকতে দেখা গেছে।

এই দৃশ্যকে কেন্দ্র করে অধ্যাপক মামুন গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “এই আচরণ কোনোভাবেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হতে পারে না। যখন এই শিক্ষার্থীরা বিসিএস ক্যাডার হবে বা এমপি-মন্ত্রিত্বে যাবে, তখন কি ধরনের আচরণ করবে তা সহজেই অনুমেয়। বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই তারা এই রকম আচরণ শিখছে। এর দায় পুরোপুরি দলীয় ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতির ওপর পড়ে।”

তিনি আরো বলেন, “পেছনের ‘আর্কিটেক্ট’ হচ্ছে এই রাজনীতির মাথারা—যারা শিক্ষার্থীদের দিয়ে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করে নিচ্ছে। দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি আশাবাদী হতে পারছি না। এই যে রাজনৈতিকভাবে নিয়ন্ত্রিত ক্যাম্পাস সংস্কৃতি, এটিই আমাদের শিক্ষার্থীদের ধ্বংস করছে।”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *